পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
৪২

দুজনে চুপ করিয়া শুইয়া রহিল, মনে মনে একটুখানি হয়ত ভয়-ভয়ও হইয়া থাকিবে। দাদু তাঁর পাল্কী এদের পাশে থামাইয়া ডাকিলেন, “সুজু-সুনা! একি, দোর বন্ধ করে কি করছো? এমন অপূর্ব্ব দৃশ্য দেখছো না।” সত্য! অদৃষ্টপূর্ব্ব এক অনির্ব্বচনীয় সৌন্দর্য্যে ভরা সেই অপরাহ্ন প্রকৃতির কি আশ্চর্য্য রূপ! এই জন্যই পথ-প্রদর্শক গুরুর প্রয়োজন—মানুষের জীবনপথের পদে-পদেই প্রয়োজন।

 বর্ষার রজনীগন্ধা এবং বহুবর্ণের জিনিয়া ফুলের বিচিত্র শোভাসম্ভারে সারাক্ষণ মুগ্ধদৃষ্টি মেলিয়া থাকিতে ইচ্ছা করে। সুজাতা বড় কর্ত্তব্যপরায়ণা শান্ত মেয়ে, ইচ্ছাকে সে দমন করিয়া রাখে, কিন্তু সুদর্শনাকে বাগানছাড়া করাও কঠিন! একেবারে সে ফুল-পাগলা। খেলার পুতুলের চাইতে ফুলের পুতুল বানাইয়া সে কত বিচিত্র খেলারই না অবতারণা করিতে পারে! অর্জ্জুনের লক্ষ্যভেদ, রামের হরধনুভঙ্গ, এমন কি রাজসূয় যজ্ঞ অবধি ঘটাইয়া বসে। ফুলের তো আর অভাব নাই, নির্দ্দিষ্ট সংখ্যার পুতুলের মতন তো আর নয়। যত খুসী লোক তৈরি করা যায়।

পাঁচ

 শরৎকালের প্রখর সূর্য্য করোজ্জল সুপরিচ্ছন্ন প্রভাত। রেলপথের দুধারে খালবিল হ্রদ তড়াগ খানা ডোবা পুষ্করিণী সমস্তই বর্ষাজলে পরিপূর্ণ হইয়া টলমল টলমল করিতেছে। যেখানে সেখানে জলজ পদ্ম শালুক হেলা ফুলের শ্বেত ও আরক্ত বর্ণ শোভায় জলময় উদ্যানগুলি আলোকিত হইয়া ঝলমল ঝলমল করিতেছিল। কোথাও হেলেঞ্চা শুশুনি কলমীদামে, কোথাও পানিফলের লতায় লতায় অথৈ জল দেখা যায় না, কোথাও নির্ম্মল জলে মৎস্যকুল নির্ভীক আনন্দে বিচরণ করিয়া ফিরিতেছে। ছোট ছোট ছেলে-