পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৩
আলোছায়া

মেয়েরা ধানক্ষেত উলটিয়া চুনাপুঁটি প্রভৃতি চারা মাছ সংগ্রহ করিয়া ফিরিতেছিল। জেলেরা জাল ঘুরাইয়া জলে ফেলিতেছে অথবা জাল গুটাইয়া ধৃত মৎস্য ডাঙ্গায় আনিতেছে, নদীর চরে চরে শ্বেত চামরের মত কাশফুলের কি বিচিত্র শোভা! বিপদ এই যে এ-দিকে চাহিতে গেলে ও দিকটায় দেখা যায় না। পাহাড় পর্ব্বত, নদ-নদী, ছোট গ্রাম, কত না’ কি! আবার টেলিগ্রামের তারে বসিয়া দোল-খাওয়া নীলকণ্ঠ, বুলবুলি, বাবুই, কাঠঠোকরা পাখীরা! তারাই কি কিছু কম দর্শনীয়? মাছরাঙ্গা, বক জলের উপর একেবারে ঝুঁকিয়া পড়িয়াছে, সুদর্শনা এদের এর আগে কখনও দেখে নাই, সুজাতা দেখিয়াছে বিতোগ্রামে—তার বেশ মনে ছিল, সে-ই এসব চিনাইয়া দিয়া তার বোনের গুরুগিরি করিতেছে।

 “দিদি! দিদি। দেখ, দেখ, কতবড় একটা শঙ্খচিল! আচ্ছা ওটা অমন দেখতে কেন? কিরকম যেন।” সুজাতা হাসিয়া বোনের গাল টিপিয়া দিল, “যাঃ, ও চিল কেন হতে যাবে, ওতো শকুনী! ঐ দেখ্ কত উড়ছে, ওদিকটায় হয়ত ভাগাড় আছে।”

 “সত্যি? আচ্ছা দিদি! নতুন ঝি যে বলতো, ‘গো-ভাগাড়ে গরু পড়ে,—শকুনির মাথায় টনক নড়ে,’ কেন আমায় ওরকম বলতো তাহলে? ভারী দুষ্টতো? আচ্ছা ওকে দেখাবো মজা।”

 “তুই যে গল্প শোনবার জন্যে ওর কাজ হওয়া মাত্তর ওর সন্ধানে সন্ধানে থেকে ডাকাডাকি করতিস্, তাই ওকথা বলত।”

 “ইস্! তাই জন্যে ওইরকম বিশ্রী একটা জানোয়ারের সঙ্গে তুলনা করবে? দাঁড়াওনা মজা দেখাচ্ছি বাড়ী গিয়ে।”

 “ঐ দেখ, ওকে বলে জলপিপি, ঐ যে জলে সাঁতার কাটছে।”

 “বাঃ, বাঃ, কি চমৎকার সাঁতার কাটে, হাঁসদের মতন, না?”

 নিজেদের বাড়ীতে ঢুকিয়া সুদর্শনা বিস্ময়ে মূর্চ্ছা যাইবার