পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
88

জোগাড়! কি চমৎকার প্রকাণ্ড প্রাক্ শোন-নদ ধরণের মস্তবড় নদী! আর কত রকমারি ফুল! প্রকাণ্ড বাগানে অসংখ্য জাতীয় গোলাপ ফুটিয়া যেন দিক সমূহ আলোকিত করিয়া আছে। তার সঙ্গে কত নাম-না-জানা, না-দেখা দেশী-বিদেশী ফুলের কেয়ারি লতার অসংখ্য কুঞ্জ বানানো। দেওয়ালের গায়ে গায়ে এবং থামে থামে স্থানে স্থানে বহু জাতীয় আইভি-খচিত। প্রকাণ্ড দৌড়বার লম্বা বারান্দাটায় বড় বড় বাহারে টবে মনসা জাতের বহুল বৈচিত্র্য অর্কিডের ঝুলন্ত খাঁচা। নাই এমন কিছুই নাই! আনন্দনাথই এ-সবের সৃষ্টিকর্ত্তা, তাঁর ‘বোটানি পড়ার’ এগুলি লব্ধফল, লাইব্রেরীতে ঐরকমই অসংখ্য ইতিহাস সংগ্রহ, নানা দেশের বিচিত্র-বিচিত্র শিলাজাত, হাতির দাঁত, হরিণের, গণ্ডারের, বাঘের ষ্টাফ্ করা মুণ্ড; পাখী—মৃত ও জীবিত দুইয়েরই বিচিত্র সংগ্রহ আছে। এছাড়া তরুলতায় ও ঝুমকা লতায় জড়ানো লোহার রেলিং-ঘেরা কৃত্রিম কানন-গৃহে মৃগযূথ ইচ্ছাসুখে বিচরণ করিয়া ফিরিতেছে। ময়ূর দুইটি অপরাহ্নে মেঘময় আকাশের দিকে চাহিয়া-চাহিয়া কি নাচটাই না নাচিল! কি বিচিত্র ইন্দ্রধনুর মত বর্ণোজ্জ্বল, ছটা-বিস্তারিত ওদের পেখম!

 অথচ দুচার দিনেই নূতনত্বের এই বিস্ময়-বিজড়িত নেশার ঘোর যখন কাটিয়া গেল, তখনই সে দেখিল, অনুভব করিল, এই তাদের নিজস্ব ঐশ্বর্য্যময় স্বর্ণপুরীতে সে আর সে সুদর্শনা নয়, পাঁচজন বা পঁচিশ জনের মধ্যে একজনমাত্র। সব্-ডিভিসনের হাকিম-দুহিতা নয়, যে-পথে বাহির হইলেই দুধারী সসম্ভ্রম সেলাম পড়ে, বরং বাসনমাজা ঝিটা পর্য্যন্ত সুবিধা পাইলে খ্যাঁক করিয়া উঠে। তাছাড়া যে কেহই যে কোন কারণেই খ্যাঁক করিতে তৈরি থাকে, ও বলিয়া নয়, এখানের এই দস্তুর,—এর জন্য সবাই প্রস্তুত আছে।