পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৫
আলোছায়া

 সব চেয়ে বড় কথা, যারা তার জীবনের কেন্দ্র দাদু আর দিদি, তাদের সে এই লোকারণ্যের মধ্যে হারাইতে বসিল। ওখানকার মত দাদুকে তেমন করিয়া তো আর একান্ত ভাবে পাওয়া সম্ভব নয়। তাঁর কত কাজ, কত অসংখ্য লোকজন আসে যায়, মাঝে মাঝে লাট-বেলাটের দরবার ইত্যাদিতে বাড়ী ছাড়িয়া যান, ওখানকার মত সুদর্শনা আর তাঁর সহযাত্রিনী হইতে পায় না, সে এখন দশের মধ্যে একজন মাত্র। অভিমানে মন ভরিয়া উঠে। তবে নিত্যকর্ম্ম-পদ্ধতিতে দাদুর সঙ্গ এখানেও নিয়ম-নিয়ন্ত্রিতা, এর কিছুমাত্র ব্যতিক্রম নাই। সম্মিলিত শিশুবাহিনীর শীঘ্রই সে তার প্রায় সমবয়স্ক পিতৃব্য পুত্রের সহিত একত্রে পরিচালক পদস্থ হইয়া উঠিল।

 দুঃখ এবং ফলে ক্রোধ উপজাত হইল তার সবচেয়ে বেশী সুজাতার উপরে। সে এখানে আসিয়া অন্য দলে ভিড়িয়া গেল এবং তার সঙ্গে নেহাৎ দিদিগিরি ফলাইতে লাগিল, সে আর তার অন্তরঙ্গ বন্ধু নয়, বন্ধু হইল মেজদি, সেজদি ইত্যাদিরা। খুব হাসাহাসি চলিতেছে, সে আসিলে সব চুপ! সেও ভিখারী নয়, যাচ্ঞা করিয়া লইবে না, থাকুক ওদের সঙ্গে, নাই ওকে দলে লইল, সেও একটা দল গড়িবে, তবে কথা এই, দিদির অভাব কি পূরণ হইবার?

ছয়

 বাড়ীতে উপর্য্যুপরি তিনটি বিবাহ হইয়া গেল। পূর্ণ দুইটি বৎসরও নয়, এরই ভিতরে তিনটি নূতন লোক আসিল একান্ত আপনজন হইয়া। নৃপেন্দ্র, সুকুমার ও সুজিত; এদের মধ্যে সুকুমার ও সুজিতকে পাইয়া সকলেই তৃপ্ত, সুদর্শনার তো কথাই নাই। তার ছাই-পাঁশ আগড়ম-বাগড়ম শোনার অদ্ভুত ধৈর্য্য ছিল সুজিতমোহনের। নিজেও সে যথেষ্ট বকিতে পারে। কত ভাল