পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫১
আলােছায়া

রোগে পৃথ্বীপতি ধীরে ধীরে জীবনীশক্তি হারাইতে লাগিলেন। দেশ-বিদেশের সমস্ত গণ্যমান্য ডাক্তার কবিরাজ কিছুতেই কিছু করিয়া উঠিতে পারিল না। সেবা যত্ন যতদূর সম্ভব তার কোনই ত্রুটি নাই। বায়ু পরিবর্ত্তন, ঘরের বজরায় গঙ্গাবক্ষে বায়ু সেবন—সবই হইল, শেষে একদিন সেই অমূল্য জীবন-প্রদীপটি নির্ব্বাপিত হইয়া গেল। সজ্ঞানে সানন্দে সর্ব্বকর্ম্মসমাপ্তির প্রশান্ত পরিতৃপ্তির সহিত সে যেন মহাপ্রস্থান, মৃত্যু নয়,—অমরত্বের পথে বিজয়যাত্রা! কিন্তু এখানকার আলো নিবিল।

 এই যে ব্যাপারটি ঘটিয়া গেল, যদিও প্রায় বর্ষাবধিই ইহার ভীষণ সম্ভাবনায় বাড়ীশুদ্ধ লোকই ভিতরে বাহিরে গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা অনুভব করিয়া আসিতেছিল, তথাপি যে মুহূর্ত্তে সেই সন্দিগ্ধ সম্ভাবনার বিষয়টা বাস্তবমূর্ত্তি পরিগ্রহ করিল, প্রত্যেকের উপর সে যেন একটা আকস্মিক আঘাতের মতই পতিত হইল। বিশেষ করিয়া সুদর্শনা—অতর্কিত আক্রমণে মানুষ যেমন দিশা হারায়, যেন সেইরকম আকুল হইয়া পড়িল। দাদু, তার চিরদিনের দাদু, যার বাড়া তার আর কিছুই বড় ছিল না, প্রিয় ছিল না, সত্য ছিল না,—সেই দাদু! অত মহৎ, অত মহান, অমন স্নেহময় সেই দাদু যে এমন করিয়া সত্য সত্যই একদিন তাকে ছাড়িয়া চলিয়া যাইতে পারেন, এতদিন ধরিয়া এতখানি দেখিয়া শুনিয়াও সে যেন ভাল করিয়া তাহা ধারণা করিয়া লইতেও পারে নাই। রোগ যতই কঠিন হোক, চিকিৎসকের যতবড় হাটই এ বাড়ীতে বসুক, মন যে তার অটুট বিশ্বাসে দেব-দেবীদের পায়ের তলায় মাথা কুটিয়া বরাবর অভয় পাইয়া আসিয়াছে। কিছুতেই সে চিত্ত বলহারা হয় নাই। দাদুর মত এত বড় জীবন কখন কি একেবারে নিঃশেষ হইয়া যাইতে পারে? এত বড় অবিশ্বাস্য ঘটনাকে বিশ্বাস করিবে কে?