পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
৫২

 কিন্তু যা অসম্ভব তাও সম্ভব হইল। সুদর্শনার মনে হইল এর পর আর তার বাঁচিয়া থাকিবার কোন প্রয়োজনই বাকি রহিল না। যে পৃথিবীতে তার দাদুর স্থান হয় নাই, সেখানে তারই বা স্থান হয় কেন? যে দেবতা দাদুকে তাঁর কাছে তাকে বঞ্চিত করিয়া টানিয়া লইয়াছেন, কিসের অবিচারে তিনি তাকে এখানে ফেলিয়া রাখিয়াছেন? কি অধিকার আছে তাঁর এত বড় পক্ষপাত করিবার? সারাদিন ভূমে লুটাইয়া ক্রমাগতই সে আত্মগত এই প্রশ্ন করিয়া বলিতে লাগিল, এমন করিয়া বাঁচিয়া থাকার সার্থকতা কি?'—এই প্রশ্নের উত্তর কেহই তাহাকে দিতে পারে নাই। কারণ কাছে তার কেহই ছিল না, —সে একাই আপনাকে,—শুধু—একমাত্র আপনাকেই এই প্রশ্নবাণে জর্জ্জরিত করিয়া তুলিতেছিল। উত্তর পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা হয়ত উহ্যভাবে মনের মধ্যে ছিল, কিন্তু উত্তর পাওয়ার কোন উপায়ই তো ছিল না। আর উপায় থাকিলেই বা কি?

 এ প্রশ্ন এই পৃথিবীতে আজই কি নূতন করিয়া উঠিল? অনেকেই এর বহু বহু পূর্ব্বেই, এমন কি, খুব সম্ভব এ প্রশ্ন চিরদিন ধরিয়াই করিয়া আসিয়াছে। উত্তর কেহই এ পর্য্যন্ত পাইয়াছে কি? খুব সম্ভব পায় নাই। এমন করিয়া বাঁচিয়া থাকার সার্থকতা কি? বাস্তবিকই প্রশ্নটা বড়ই কঠিন। দুঃখ, দৈন্য, দুর্ব্বিপাকে ভরা মৃত্যুময় এই সংসারে রোগের অসহ্য যন্ত্রণা, শোকের দুর্ব্বিসহ আঘাত, অভাবের অকথ্য তাড়না, সর্ব্বোপরি মানুষের প্রতি মানুষেরই অমানুষিক অবিচার ও অত্যাচার,—এত সব সহ্য করিয়াও মানুষ বাঁচিয়া থাকে কেমন করিয়া? বাঁচিয়া থাকে কেন? বুঝিয়া ওঠা কঠিন বই কি! অথচ দেখা যায়—সদা সর্ব্বদাই দেখা যায়, তেমন করিয়া বাঁচিয়া থাকা সার্থক হোক বা অসার্থক হোক, মানুষ বাঁচিয়াই থাকে,—সকল অবস্থা অতিক্রম করিয়াও বাঁচে।