পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৈৗঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
৫৪

ভালবাসা অন্তরের মধ্য হইতে ঢালিয়াও দিয়াছিল, কিন্তু ধৈর্য্যশীলা ও শান্ত প্রকৃতির মেয়ে সে, অন্তঃসলিলা ফল্গুর মত অন্তর্প্রবাহিনী, বাহিরে সকল অবস্থাকেই সে ধীরস্থির ও নীরব সংযমের সহিত গ্রহণ করিতে পারে। তার উপর স্বামীর প্রেমে, সন্তান-স্নেহে সে পত্নী ও জননীর কর্ত্তব্য লইয়াও কতকটা আত্মবিস্মৃত। নিজের দুঃখ লইয়া তাহাকে একান্তভাবে লালন করিয়া বেড়াইবার অবসরই বা তার কোথায়? বরং সে এই মহাপ্রলয়ের মধ্যে বাবার জন্য, পিসিমাদের জন্য, বিশেষতঃ গভীর শোকে সমাচ্ছন্ন বোনটির জন্যই আপনাকে সঁপিয়া দিয়াছে। বিরাট শ্রাদ্ধ-ব্যাপারের সুবিপুলতর আয়োজনের মধ্যেও শ্রদ্ধান্বিতা পূজারিণীরূপে নীরব অশ্রুজলে অভিসিঞ্চিতা হইয়া যথাকর্ত্তব্য করিতে করিতে আত্মপ্রতিষ্ঠ হইতে সচেষ্ট আছে।

 সুদর্শনার শোক কিন্তু সহজবোধ্য নয়। সে এ পর্য্যন্ত দাদু ভিন্ন আর কোন সম্পর্কের মধ্যে খুব নিবিড়ভাবে আত্মসমর্পণ করিয়া দিতে পারে নাই। এমন কি, দিদি ব্যতীত আর কোনখানেই নিজের কোনরূপ দাবীও সে এ পর্য্যন্ত ভাল করিয়া প্রতিষ্ঠা করে নাই। একমাত্র দাদুকেই সে তার সমুদয় চিত্ত-প্রাণ সমর্পণ করিয়া দিয়াছিল। সেই দাদুকে ছাড়িয়াও যে সে বাঁচিয়া থাকিতে পারে, এই অভিজ্ঞতা তাহাকে সুগভীর বিস্ময়ে এবং সুকঠোর ধিক্কারে পরিপূর্ণ করিয়া তুলিল। এও কি হয়? এও কি সম্ভব? নিজেকে সে কঠিন কণ্ঠে পুনঃপুনঃই এই প্রশ্ন করিয়া নিজের প্রতি অশ্রদ্ধায় যেন বিতৃষ্ণ হইয়া উঠিতে লাগিল। মনে মনে বার বার করিয়াই বলিল, “ধিক! এই তোমার অত ভালবাসা? তুমি মরিয়া গেলে দাদু কিন্তু কখনই এমন করিয়া সহ্য করিতে পারিতেন না!”

 আশৈশবের শত সহস্র অবিস্মৃত স্মৃতি যেন সহস্রফণা ফণীর মতই