পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
৫৮

অবশ্যপ্রাপ্য রাজকরের মত অলঙ্ঘনীয় প্রাপ্য বলিয়া মনে করিত। এক ছেলে গরীবের ঘরেই কি, আর বড়লোকের ঘরেই বা কি, একই ভাগ্য লইয়া জন্মায়। অবশ্য সোনার চামচ মুখে করিয়া কেহই আসে না, সেটা ঠিকই; তবে সোনার জলে ধুইয়া যায় তাদের মায়ের চোখ দুটি, কোথাও কোথাও বাপেরও। আর সেইখানেই বিপদের ভবিষ্য বোঝা ভারী হইয়া উঠিতে থাকে। উভয় পক্ষেই যদি “লালন” চলে, “তাড়না”র নাম থাকে না, পুত্র যথাকালে মিত্র হইতে পারে না। পরাণের বাপের চাইতে তার মা কিছু বেশী দিন বাঁচিয়াছিল। তার যখন মৃত্যু হয়, তখন পরাণের ঘরের নূতন বউ পুরাতন হইতে চলিয়াছে। নয় বৎসর বয়সে বিবাহ হইয়া এগারো বছরে জয়দুর্গা ঘর বসত করিতে শ্বশুরঘরে আসিয়া বসিল। সেও প্রায় তিন বৎসর আগের কথা। পাড়ার হিসাবে তার বয়স পৌণে এক কুড়ি হইতে চলিয়াছে, অথচ থাকোমণিকে সে একটি পৌত্র রত্ন দিবার নামও করিল না। বধূর এই অন্যায় অনাচারে পরাণের মা ভিতরে বাহিরে সত্য করিয়াই উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিতে লাগিল। পাড়ার পাঁচজনেও ইতিমধ্যে বলাবলি করিতে সুরু করিয়াছে যে, “বউটা বাঁজা তালগাছ হলো নাকি লো? হাঁ পরাণের মা, নাতি কি আমাদের মিষ্টি খাওয়াবার ভয়ে পালিয়ে রৈল নাকি গা? বয়েস ত বৌমার গড়িয়ে এল, আর হবে কবে?”

 প্রথম প্রথম থাকো এ-সব পরিহাসের হিসাবেই হাসিমুখে গ্রহণ করিয়া যথোচিত ভাবেই প্রত্যুত্তর দিয়াছে; কিন্তু ক্রমশঃ পাঁচ মুখে পাঁচ কথা শুনিতে শুনিতে তার স্নেহ-দুর্ব্বল মন আশঙ্কাচঞ্চল হইয়া উঠিতে লাগিল। তাইতো, সত্যিই তো, সেই কবে বিয়ে হয়েছে, এতদিনে একটি সন্তান হইতে পারিত। বাড়ীর তুলসীতলায় ও ‘বাবাঠাকুরে’র উদ্দেশ্যে মানত করিল, ব্রাহ্মণপাড়ার