বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৯
সর্ব্বকালের হাওয়া

 যেমন তেমন দামে বাড়ীঘর, তৈজসপত্র বেচিয়া পরাণ গ্রাম ছাড়িয়া চলিয়া গেল। অতসীর সঙ্গে সে ফিরিয়া আসিয়া আর দেখা করে নাই, জন্মের মত যখন বিদায় লইতেছে তখন একবারের জন্য সে দারুণ প্রলুব্ধ হইয়া উঠিল, জয়দুর্গা যদি তাকে সে ঘটনার পর ক্ষমা করিতে পারে, অতসী কি পারিবে না? জয়দুর্গাকে সে একদিনের জন্যও ভালবাসে নাই, কিন্তু অতসী ত জানে তাকে সে কতখানি ভালবাসিয়াছিল। মায়ের দেওয়া টাকা, অনাগত সন্তানের মাদুলীহার, নিজের সখের সৌখীন টুকিটাকি সমস্তই ত সে তার ভালবাসার নিদর্শন অতসীকেই দিয়াছে। আজও জয়দুর্গার সোনার তাগা, কানফুল, নাকছাবি, রূপার গোট, চাবিশিলি, রূপার চুড়ী, পায়ের কড়াচুকী তাকেই দিতে পারে, সে কি সঙ্গে যায় না? বাড়ী জমি বিক্রির টাকা দিয়া কোন অজ্ঞাত গ্রামে গিয়া, না হয় সহরে পৌঁছিয়া তারা নূতন করিয়া ঘরকন্না পাতিবে। মাছ আর ধরিবে না, কল-কারখানায় আজকাল কত রকম-বেরকমের কাজ।

 অতসী তাহাকে দেখিয়া একছুটে পলাইয়া যাইতেছিল। তার কঠিন স্বরের পিছু ডাকে সভয়ে পিছন ফিরিল বটে, কিন্তু ভরসা করিয়া খুব কাছাকাছি আসিতে পারিল না, খানিকটা দূর হইতেই জিজ্ঞাসা করিল, “কি?” ঐটুকু স্বর হইতেই তার বক্ষস্পন্দনের অস্বাভাবিক গতির পরিচয় সুস্পষ্ট হইয়া উঠিতেছিল।

 পরাণের বুকটাও ভিতরে ভিতরে ভারী হইয়া উঠিয়াছে। স্বাভাবিক ভাবে কথা কহিবার চেষ্টা করিয়াও অনেকখানি ইতস্ততঃ করিয়াই সে কহিল, “আমি গাঁ ছেড়ে যাচ্ছি।”

 অতসী যথাপূর্ব্ব থাকিয়াই সংক্ষেপে উত্তর দিল, “শুনেছি”—

 “হ্যাঁ, বাড়ীঘর সমস্তই বেচে ফেলে নগদ টাকা করেছি, শুধু গয়নাগুলো যেমন তেমনই আছে।