পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হেমলক

দিব্যেন্দুর সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ অনেকদিনই হয়েছিল কিন্তু চিঠিপত্রের আদান-প্রদান বহুকাল পর্য্যন্ত বজায় থেকেছে। কলেজ ছাড়ার পর আমি ঢুকলুম ডাক্তারী লাইনে, আর সে পড়াশুনো ছেড়েই দিলে। তা দেবে নাই বা কেন, প্রথম গ্রেট ওয়ারে ওর বাবা তো আর কম টাকাটা ব্যবসা করে লাভ নি। শুনেছি সে এত বেশী যে তার নিম্নতন তিন পুরুষে নাকি পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে অর্থাৎ বেশ একটি স্প্রিংয়ের গদি-আঁটা প্রশস্ত ইজিচেয়ারে শুয়ে শুয়ে জীবনগুলো কাটিয়ে দিতে পারবেন। অবশ্য যতটা রটে, সবটাই ঘটে না, তবু কিছু কিছু তো বটেই! একথাটাও তো আর অসত্য নয়। দিব্যেন্দু তার বাপের কাজ-কর্ম্মের সাহায্যও নাকি কতকটা করেছিল, ওর বাবার তখন লোহার কারবারে মোটামুটি সোনা ফলছে। বহর কতক পরে ওর বাবা হঠাৎ মারা পড়লেন, তার বছর দু’বছর পরেই শুনলুম দিব্যেন্দু তার সোনা-ফলা লোহার কারবার খুব মোটা একটা টাকা নিয়ে কোন্ এক মাড়োয়ারীকে বিক্রি করে দিয়েছে। বড়ই চটে গেলুম। বাঙ্গালীকে ঐ রোগেই তো মেরেছে! আর এই করে করেই মাড়োয়ার হয়ে উঠেছে সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা এবং বাংলা দেশটি হয়ে দাঁড়াচ্চে ধুধু মরু! দুদিন পরে এর শুক্‌নো গাছের ডালে ডালে যে পাখীরা শুধু ডাকতে থাকবে, তাদের ধ্বনি হচ্ছে—‘ঘু-ঘু-ঘু ঘু-ঘু-ঘু! এবং বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে এরাই বিচরণ করবে। চিঠি লিখলুম,—“তোমার বাবার কষ্টোপার্জ্জিত অতবড় কারবারটা এমন করে নষ্ট করলে, এর মানে কি?

 উত্তর দিলে, ‘এখন নয়, দুটো বছর পরে বুঝতে পারবে মানে কি!’

 ১৯২৭-২৮ সাল থেকে পৃথিবীর সর্ব্ববিধ বাজারই পড়তে আরম্ভ