পাতা:খুন না চুরি? - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
দারোগার দপ্তর, ১৯৩ সংখ্যা।

নাভীর নিম্নে করদ্বয় মিলিত করিয়া, একাগ্রচিত্তে ঈশ্বরোপাসনায় নিযুক্ত। সম্মুখে গ্রজ্বলিত অগ্নি ধূ ধূ শব্দে জ্বলিতেছিল।

 তাহাদের গভীর ও প্রশান্ত মূর্ত্তি দেখিয়া আমার ভক্তির উদ্রেক হইল। যে কার্য্যে গিয়াছিলাম, সহসা তাহা করিতে পারিলাম না। ভাবিলাম, এমন শান্তমূর্ত্তি যাহাদের, তাহারা নারীহত্যা করিবে কেন? কিন্তু পরিক্ষণেই দেখিলাম, তিনজনের ললাটদেশে সিন্দুরের দীর্ঘফোঁটা, গলে রুদ্রাক্ষ মালা, হস্তেও অনেকগুলি রুদ্রাক্ষ, পরিধানে রক্তবর্ণ পট্টবাস, গলে যজ্ঞোপবীত। বেশ দেখিয়াই বোধ হইল, তাহারা কাপালিক। শক্তি-উপাসক। শুনিয়াছি, কাপালিকগণ সিদ্ধ হইবার জন্য নরহত্যা করিতেও পশ্চাৎপদ হয় না। এরূপ ঘটনা অনেক শোনা গিয়াছিল। কিন্তু তাহাদের দ্বারা নারীহত্যা একপ্রকার অসম্ভব বলিয়া বোধ হইল। যে শক্তির উপাসনার জন্য তাহারা সেই কঠোর নিয়ম প্রতিপালন করিতেছে, ইচ্ছা করিয়া কেন তাহারা সেই শক্তিকে খুন করিবে, বুঝিলাম না।

 যাহাই হউক, দ্বার সমীপে গিয়া যখন দেখিলাম, তিনজন মাত্র সন্ন্যাসী—আর কোন লোক নাই, তখন আমার সাহস হইল। আমি বাহির হইতে জুতার শব্দ করিতে লাগিলাম। ভাবিলাম, সে শব্দে তাহাদের ধ্যান ভঙ্গ হইবে। কিন্তু আমার অনুমান মিথ্যা হইল। তাহাদের কেহই চক্ষু উন্মীলন করিল না, সকলেই পূর্ব্বের মত ধ্যানে নিমগ্ন রহিল।

 আমি আর বিলম্ব করিতে পারিলাম না। কোচমানকে বাহিরে রাখিয়া আমি একাই ভিতরে যাইলাম এবং চীৎকার করিয়া ডাকিতে লাগিলাম। অনেক ডাকাডাকির পর সর্ব্বাপেক্ষা কনিষ্ঠ চক্ষু চাহিল, কিন্তু সম্মুখে আমাকে দেখিয়া পুনরায় চক্ষু মুদিত