পাতা:গরীবের মেয়ে - অনুরূপা দেবী.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩
গরীবের মেয়ে

 সাবিত্রী মেয়েটি মেয়েদের স্কুলের মধ্যে নাকি কলহ-বিদ্যায় বিশেষ পারদর্শিনী।—তবে এ বিষয়ে প্রথম পুরস্কারলাভ অবশ্য এ পর্যন্ত সে যে করিতে পারে নাই, তাহার কারণ, ওই বিষয়ে স্কুলে কোন প্রাইজ এখন পর্য্যন্ত দিবার ব্যবস্থা ছিল না, থাকিলে মনোরমার পরিবর্তে বোধ করি সে-ই সেটা পাইত। তবে তাদের ‘ব্র্যাকেটে পাশ করা ও নেহাৎ অসম্ভব ছিল না। কারণ, হাঁক-ডাক কম থাকিলেই যে নৈপুণ্যের অভাব বুঝায়, তাহা নহে। বরং টিপিয়া টিপিয়া চোখা চোখা শবক্ষেপ করিতে জানাতেই সমধিক সশর পটুত্ব বুঝায়। এখন মনোরমার মন্তব্য শুনিয়া বড় বড় ড্যাব ডেবে দুই চোখকে গোল করিয়া পাকাইয়া সাবিত্রী যেন বাঘের মত গর্জিয়া তাহার শত্রু পক্ষের উপর হুমকি দিয়া উঠিল, “বলি মোনা! তোর যে বড্ডই চ্যাটাং চ্যাটাং কথা হয়েছে দেখতে পাই? আমাদের বাপ-দাদারা আমাদের নাইনের টাকা ইস্কুলকে দেয় বা না দেয়, তোর তাতে কি আসে যায় শুনি? তুই যা খুশী তাই ট্যাক্ ট্যাক ক’রে বলবি ক্যানলা? ফের যদি কখন আমার সঙ্গে লাগতে আসবি তা হ’লে—”

 “কি, মাববি না কি? সুষমা, লীলা, অনুকা সব্বাই সাক্ষী থাকলি, এর যদি না আমি একটা প্রতীকার করি তা হ’লে—”

 “কি প্রতীকার কববি লো? জেলে দিবি না ফাঁসি কাঠে ঝোলাবি?”

 এইরূপ সলজ্জ আস্ফালনে পথের দুই সারি লোকের চিত্তাকর্ষণ করিতে করিতে নেপথ্যচারিণীগণ নিজ নিজ গৃহাভিমূখিনী হইলেন।