শিং খ’সে গেছে, খুরের জায়গায় থাবা আর নখ হয়েছে। তাদের কেউ বাঘের, কেউ শেয়ালের, কেউ ভালুকের রূপ পেয়েছে। প্রজা-গরুরা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলে, ভাই সব, এ কি দেখছি? কোন্ পাপে তোমাদের এই শ্বাপদ-দশা হ’ল? শাসক-গরুরা উত্তর দিলে, হুঁ হুঁ, পাপ নয়, আমরা ক্ষত্রিয় হয়েছি, ঘাস খেয়ে রাজকার্য করা চলে না, জাবর কাটতে বৃথা সময় নষ্ট হয়। এখন আমরা আমিষাহারী। ঘরেবাইরে শত্রুরা ওত পেতে আছে, তোমাদের রক্ষণ আর সেবার জন্য বিস্তর কর্মচারী রাখতে হয়েছে। আমাদের প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়, সেজন্য ক্ষুধাও প্রবল। বনের সব মৃগ আমরা খেয়ে ফেলেছি। যদি সুশাসন চাও তবে তোমরা সকলে কিঞ্চিৎ স্বার্থত্যাগ ক’রে আমাদের উপযুক্ত আহার যোগাও, যেমন সিংহের আমলে যোগাতে। গরুরা রাজী হ’ল। কিন্তু গুটি কতক ধূর্ত গরু, ভাবলে, বাঃ, এরা তো বেশ আছে, সর্দারি করে বেড়াচ্ছে, ঘাস খুঁজতে হচ্ছে না, জাবর কাটতে হচ্ছে না, আমাদেরই হাড় মাস কড়মড় ক’রে খাচ্ছে। আমরাই বা ফাঁকে পড়ি কেন? এই স্থির ক’রে তারা দল বেঁধে শ্বাপদ গরুদের গুঁতিয়ে তাড়িয়ে দিলে এবং নিজেরাই শাসক হ’ল। কিছুকাল পরে তারাও শ্বাপদ হয়ে গেল এবং তাদের দেখে অন্য গরুদেরও প্রভুত্বের লোভ হ’ল। এই রকমে সমস্ত গরু গুঁতোগুঁতি কামড়াকামড়ি ক’রে ম’রে গেল, গোনর্দ দেশ একটি গোভাগাড়ে পরিণত হ’ল।
৭০