পাতা:গল্পগুচ্ছ (চতুর্থ খণ্ড).pdf/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মকুট
৯৮৩

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

শিকারের বন্দোবস্ত সমস্ত স্থির হইলে পরে রাজধর আস্তে আস্তে ইন্দ্রকুমারের স্ত্রী কমলাদেবীর কক্ষে গিয়া উপস্থিত। কমলাদেবী হাসিয়া বলিলেন, “এ কী ঠাকুরপো! একেবারে তীরধনুক বর্মচর্ম লইয়া যে! আমাকে মারিবে নাকি!”

 রাজধর বলিলেন, “ঠাকুরানী, আমরা আজ তিন ভাই শিকার করিতে যাইব, তাই এই বেশ।”

 কমলাদেবী আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, “তিন ভাই! তুমিও যাইবে নাকি। আজ তিন ভাই একত্র হইবে! এ তো ভালো লক্ষণ নয়। এ যে এ্যহস্পর্শ হইল।”

 যেন বড়ো ঠাট্টা হইল এইভাবে রাজধর হা হা করিয়া হাসিলেন, কিন্তু বিশেষ কিছু বলিলেন না।

 কমলাদেবী কহিলেন, “না না, তাহা হইবে না— রোজ রোজ শিকার করিতে যাইবেন আর আমি ঘরে বসিয়া ভাবিয়া মরি।”

 রাজধর কহিলেন, “আজ আবার রাত্রে শিকার।”

 কমলাদেবী মাথা নাড়িয়া বলিলেন, “সে কখনোই হইবে না। দেখিব আজ কেমন করিয়া যান।”

 রাজধর বলিলেন, “ঠাকুরানী, এক কাজ করো, ধনকবাণগুলি লুকাইয়া রাখো।”

 কমলাদেবী কহিলেন, “কোথায় লুকাইব।”

 রাজধর। আমার কাছে দাও, আমি লুকাইয়া রাখিব।

 কমলাদেবী হাসিয়া কহিলেন, “মন্দ কথা নয়। সে বড়ো রঙ্গ হইবে।”

 কিন্তু মনে-মনে বলিলেন, ‘তোমার একটা কী মতলব আছে। তুমি যে কেবল আমার উপকার করিতে আসিয়াছ তাহা বোধ হয় না।’

 “এসো, অস্ত্রশালায় এসো” বলিয়া কমলাদেবী রাজধরকে সঙ্গে করিয়া লইয়া গেলেন। চাবি লইয়া ইন্দ্রকুমারের অস্ত্রশালার দ্বার খুলিয়া দিলেন। রাজধর যেমন ভিতরে প্রবেশ করিলেন অমনি কমলাদেবী দ্বারে তালা লাগাইয়া দিলেন। রাজধর ঘরের মধ্যে বন্ধ হইয়া রহিলেন। কমলাদেবী বাহির হইতে হাসিয়া বলিলেন, “ঠাকুরপো, আমি তবে আজ আসি।”

 বলিয়া চলিয়া গেলেন।

 এ দিকে সন্ধ্যার সময় ইন্দ্রকুমার অন্তঃপুরে আসিয়া অস্ত্রশালার চাবি কোথাও খুঁজিয়া পাইতেছেন না। কমলাদেবী হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “হাঁগা, আমাকে খুঁজিতেছ বুঝি, আমি তো হারাই নাই।”

 শিকারের সময় বহিয়া যায় দেখিয়া ইন্দ্রকুমার দ্বিগুণ ব্যস্ত হইয়া খোঁজ করিতে লাগিলেন। কমলাদেবী তাঁহাকে বাধা দিয়া আবার তাঁহার মুখের কাছে গিয়া দাঁড়াইলেন; হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “হাঁগা, দেখিতে কি পাও না। চোখের সম্মুখে, তবু ঘরময় বেড়াইতেছ?”

 ইন্দ্রকুমার কিঞ্চিৎ কাতরস্বরে কহিলেন, “দেবী, এখন বাধা দিয়ো না— আমার একটা বড়ো আবশ্যকের জিনিস হারাইয়াছে।”

 কমলা কহিলেন, “আমি জানি তোমার কী হারাইরাছে, আমার একটি কথা যদি