পাতা:গল্পগুচ্ছ (চতুর্থ খণ্ড).pdf/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SOS ఆ গল্পগুচ্ছ আমি একবার জমিদারি দেখা উপলক্ষ্যে একটি নদীর তীরে নৌকা লাগিয়েছি । নৌকায় বসে কোনো রকম কাজ করছি। এমন সময়ে দেখলাম একটি মেয়ে—বড়ো মেয়ে—হিন্দরে ঘরে অত বড়ো মেয়ে অবিবাহিতা প্রায় দেখা যায় না— নদীর তাঁর থেকে আমার নৌকার দিকে দেখছে। সে তখনই চলে গিয়ে আবার ফস করে একটি ছেলে কোলে নিয়ে ফিরে এল, এসে নৌকার এ-দিক ও-দিক দেখতে লাগল। নৌকার জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে ভিতরে দেখতে লাগল। তার সরল সতেজ দটি, চলাফেরার মধ্যে একটা সহজ চফতির ভাব দেখে আমার বড়ো ভালো বোধ হল। বাঙালী মেয়েদের মধ্যে সে রকম ভাব আমি প্রায় দেখি নাই। আমার মেয়েটিকে ডেকে দু-একটি কথা জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা হল। কিন্তু আবার কী ভেবে পারলাম না । সেদিন তো গেল। তার পরের দিন দেখি আমার পাশের একটি নৌকায় চালডাল বাসন-কোসন প্রভৃতি ঘরকন্নার জিনিস বোঝাই হচ্ছে; যেন কোনো মেয়ে খবশরেবাড়ি যাবে। খানিক পরে দেখি ঠিক কালকের সেই মেয়েটিকে কনে সাজিয়ে অনেকে মিলে নৌকার দিকে নিয়ে আসছে। সে কিছলতে নৌকায় উঠবে না, আর তারাও জোর করে তাকে তুলে দেবে। সচরাচর মেয়েটেয়ে পাঠাবার সময় যে কান্নাকাটির ভাব দেখি, এ ক্ষেত্রে তার সম্পণে অভাব দেখলাম। কান্নাকাটির কথা দরে থাকুক অনেকেই বেশ সফর্মতি ও আমোদ করছে। কেবল একটি মেয়ে, বড়ো মেয়ে, সে তার মায়ের কোলে চড়ে আছে, তার লম্বা লশবা পা দখানা ঝুলে পড়েছে— সেই মায়ের ঘাড়ে মুখ লুকিয়ে নীরবে ফলে ফলে কাঁদছে। তার পরে পাশের নৌকা ছেড়ে দিলে, তীরের স্ত্রীলোকেরাও চলে গেলেন। আমি কেবল দরে থেকে শনলাম একটি মেয়েমানুষ আর-একজনকে বলছেন— ‘ওকে তো জানো বোন, ও ওই রকমই। কত করে বললাম, পরের ঘর করতে যাচ্ছিস, বেশ সাবধানে থাকিস ঘাড় হে’ট করে থাকিস, উচু করে কথা বলিস নে ; কিন্তু সে কি তা পারবে ! ইত্যাদি—এই ঘটনাই আমার ‘সমাপ্তি’ রচনার ভিত্তি । [ ২ মে ১৯o৯ ] — রবীন্দ্রনাথের উক্তি। জিতেন্দুলাল বন্দোপাধ্যায়ের অনলিপি শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ। সুপ্রভাত, ভাদ্র ১৩১৬ দেখতুম কিনা বোট থেকে—মেয়েরা ঘাটে আসত, কেউ বা ছেলে কোলে, কেউ বা এক-পাঁজা বাসন নিয়ে, কেউ বা কলসী ক'খে। ওই দশ-এগারে বছরের মেয়েটা, ছোটো ছোটো করে চুল ছাঁটা, কাথে একটা ছেলে নিয়ে রোজ আসত। রোগা রোগা দেখতে, শামলা রঙ। বোটের উপরে আমাকে সবাই দেখত, কিন্তু ওর দেখাটা ছিল অন্যরকম। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকত। মাঝে মাঝে কোলের ছেলেটাকে আমাকে দেখাতো আঙুল দিয়ে– “ওই দেখ" । আমার ভারি মজা লাগত। এমন একটা স্বাভাবিক গফতি চঞ্চলতা ছিল তার, যা ও বয়সের জড়সড় বাঙালীর মেয়েদের বেশি দেখা যায় না। তার পর একদিন দেখলাম বধবেশে শ্বশুরবাড়ি চলল সেই মেয়ে। সেই ঘাটে নৌকো বাঁধা। কী তার কান্না ! অন্য মেয়েদের বলাবলি কানে এল— ‘যা দুরন্ত মেয়ে। কী হবে এর শ্বশুরবাড়িতে!’ ভারি দুঃখ হল তার শ্বশুরবাড়ি যাওয়া দেখে। চঞ্চলা হরিণীকে বন্দিনী করবে। ওর কথা মনে