“চমৎকার।”
“ওটা লিখে রেখো তোমার ডায়ারিতে।”
“তা রাখব।”
“কথাটার মানেটা বুঝেছিস তো রেবি?”
“বোধ হয় বুঝেছি।”
“মনে রাখিস মস্ত প্রতিভার মস্ত দায়িত্ব। ও তো কারও নিজের জিনিস নয়। ওর জবাবদিহি অনন্তকালের কাছে। শুনছ সুহি, শনছ? কথাটা কেমন বলেছি বলো তো ভাই!”
“খুব ভালো বলেছেন। আগেকার দিনের রাজা থাকলে গলা থেকে মালা খুলে—”
“তারা তো মরেছে সব, কিন্তু—”
“ঐ কিন্তুটুকু মরে নি, মনে থাকবে।”
রেবতী বললে, “ভয় নেই, কিছুতে আমাকে দুর্বল করবে না।”
সোহিনীকে পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে গেল। সোহিনী তাড়াতাড়ি আটকিয়ে দিলে।
চৌধুরী বললেন, “আরে, করলে কী! পুণ্যকর্ম না করার দোষ আছে, পুণ্যকর্মে বাধা দেওয়ার দোষ আরও বেশি।”
সোহিনী বললে, “প্রণাম যদি করতে হয় তো ঐখানে।”–
ব’লে বেদির উপরে বসানো নন্দকিশোরের একটি মূর্তি দেখিয়ে দিলে। ধূপধুনো জলছে, ফুলে ভরে আছে থালা।
বললে, “পাতকীকে উদ্ধার করার কথা পুরাণে পড়েছি। আমাকে উদ্ধার করেছেন ঐ মহাপুরুষ। অনেক নীচে নামতে হয়েছিল, শেষকালে তুলে বসাতে পেরেছেন— পাশে বললে মিথ্যে হবে, তাঁর পায়ের তলায়। বিদ্যার পথে মানুষকে উদ্ধার করবার দীক্ষা তিনি আমাকে দিয়ে গেছেন। বলে গিয়েছেন যেন মেয়েজামাইয়ের গুমর বাড়াবার জন্যে তাঁর জীবনের খনিখোঁড়া রত্ন ছাইয়ের গাদায় হারিয়ে না ফেলি। বললেন, ‘ঐখানে রেখে গেলেম আমার সঙ্গতি আর সঙ্গতি আমার দেশের।”
অধ্যাপক বললেন, “শুনলি তো রেবু? এটা হবে ট্রাস্ট্ সম্পত্তি, তোকে দেওয়া হবে তার কর্তৃত্ব।”
রেবতী ব্যস্ত হয়ে বললে, “কর্তৃত্ব নেবার যোগ্য আমি নই। আমি পারব না।”
সোহিনী বললে, “পারবে না! ছি, এ কি পুরুষের মতো কথা।”
রেবতী বললে, “আমি চিরদিন পড়াশালো করে এসেছি, এরকম কাজের ভার কখনও নিই নি।”
চৌধুরী বললেন, “ডিম ফোটবার আগে কখনও হাঁস সাঁতার দেয় নি। আজ তোমার ডিমের খোলা ভাঙবে।”
সোহিনী বললে, “ভয় নেই তোমার, আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে থাকব।”
রেবতী আশ্বস্ত হয়ে চলে গেল।