পাতা:গল্পগুচ্ছ (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ল্যাবরেটরি
৮৫৩

 “আপনি আমাকে অবিশ্বাস করছেন?”

 “এতদিন অবিশ্বাস তো করি নি। কিন্তু লজ্জাশরম যদি থাকে বিশ্বাসরক্ষার কথা তুমি আর মুখে এনো না।”

 রেবতী উঠতে যাচ্ছিল, নীলা তাকে কাপড় ধরে টেনে বসিয়ে দিলে। বললে, “আজ উনি বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করেছেন, সকলে যান আগে, তার পরে উনি যাবেন।”

 এর মধ্যে একটা নিষ্ঠুর ঠোকর ছিল। সার আইজাক মায়ের বড়ো পেয়ারের, ওর মতো এতবড়ো বিশ্বাসী আর কেউ নেই, তাই সকলকে ছাড়িয়ে ল্যাবরেটরির ভার ওর উপরেই। আরও একটু দেগে দেবার জন্যে বললে, “জান মা? অতিথি আজ পঁয়ষট্টি জন, এ ঘরে সকলকে ধরে নি, এক দল আছে পাশের ঘরে— ঐ শুনছ না হো হো লাগিয়েছে? মাথা পিছু পঁচিশ টাকা ধরে নেয়, মদ না খেলেও মদের দাম ধরে দিতে হয়। খালি গেলাসের জরিমানা কম লাগল না। আর কেউ হলে মুখ চুপসে যেত। ওঁর দরাজ হাত দেখে ব্যাঙ্কের ডিরেক্টরের তাক লেগে গেছে। সিনেমার গাইয়েকে কত দিতে হয়েছে জান? — তার এক রাত্তিরের পাওনা চারশো টাকা।”

 রেবতীর মনের ভিতরটা কাটা কইমাছের মতো ধড়্‌ফড়্ করছে। শুকনো মুখে কথাটি নেই।

 সোহিনী জিজ্ঞাসা করলে, “আজকের সমারোহটা কিসের জন্যে?”

 “তা জান না বুঝি? অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসে তো বেরিয়ে গেছে, উনি জাগানী ক্লাবের প্রেসিডেণ্ট্‌ হয়েছেন, তারই সম্মানে এই ভোজ। লাইফ মেম্বরশিপের ছশো ঢাকা সুবিধেমত পরে শুধে দেবেন।”

 “সুবিধে বোধ হয় শীঘ্র হবে না।”

 রেবতীর মনটার মধ্যে স্টীমরোলার চলাচল করছিল।

 সোহিনী তাকে জিজ্ঞাসা করলে, “তা হলে এখন তোমার ওঠবার সুবিধে হবে না?”

 রেবতী নীলার মুখের দিকে তাকালে। তার কুটিল কটাক্ষের খোঁচায় পুরুষমানুষের অভিমান জেগে উঠল। বললে, “কেমন করে যাই, নিমন্ত্রিতেরা সব—”

 সোহিনী বললে, “আচ্ছা, আমি ততক্ষণ এখানে বসে রইলাম। নাসেরউল্লা তুমি দরজার কাছে হাজির থাকো।”

 নীলা বললে, “সে হতে পারবে না মা! আমাদের একটা গোপন পরামর্শ আছে, এখানে তোমার থাকা উচিত হবে না।”

 “দেখ, নীলা, চাতুরীর পালা তুই সবে শুরু করেছিস, এখনও আমাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবি নে। তোদের কিসের পরামর্শ সে খবর কি আমি পাই নি। বলে দিচ্ছি, তোদের সে পরামর্শের জন্যে আমারই থাকা সব চেয়ে দরকার।”

 নীলা বললে, “তুমি কী শুনেছ কার কাছে।”

 “খবর নেবার ফন্দি থাকে গর্তর সাপের মতো টাকার থলির মধ্যে। এখানে তিনজন আইনওয়ালা মিলে দলিলপত্র ঘেঁটে বের করতে চাও ল্যাবরেটরি-ফণ্ডে কোনো ছিদ্র আছে কি না। তাই নয় কি নীলু।”

 নীলা বললে, “তা, সত্যি কথা বলব। বাবার অতখানি টাকায় তাঁর মেয়ের কোনো