পাতা:গল্পগুচ্ছ (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কর্মফল
৫৩৫

দোকান ঝাঁটিয়ে কাপড়ই কেনা হচ্ছে। যেন নবাবপত্র। ছি ছি, নিজের ছেলেকে কি এমনি করেই মাটি করতে হয়।

সতর্জনে

 খোকা, চুপ কর্ বলছি। ঐ হামদোবুড়ো আসছে!

সুকুমারীর প্রবেশ

 সুকুমারী। বিধু, ও কী ও। আমার ছেলেকে কি এমনি করেই ভূতের ভয় দেখাতে হয়। আমি চাকর-বাকরদের বারণ করে দিয়েছি, কেউ ওর কাছে ভূতের কথা বলতে সাহস করে না। আর, তুমি বুঝি মাসি হয়ে ওর এই উপকার করতে বসেছ! কেন বিধু, আমার বাছা তোমার কী অপরাধ করেছে। ওকে তুমি দুটি চক্ষে দেখতে পার না, তা আমি বেশ বুঝেছি। আমি বরাবর তোমার ছেলেকে পেটের ছেলের মতো মানুষ করলেম, আর তুমি বুঝি আজ তারই শোধ নিতে এসেছ!

 বিধু। (সরোদনে) দিদি, এমন কথা বোলো না। আমার কাছে আমার সতীশ আর তোমার হরেনে প্রভেদ কী আছে।

 হরেন। মা, দাদা আমাকে মেরেছে।

 বিধু। ছি ছি, খোকা, মিথ্যা বলতে নেই। দাদা তোর এখানে ছিলই না তা মারবে কী করে।

 হরেন। বাঃ—দাদা যে এইখানে বসে চিঠি লিখছিল—তাতে ছিল ভয়ে আকার ভা, ল, ভাল, বয়ে আকার সয়ে আকার, ভালোবাসা। মা, তুমি আমার জন্যে দাদাকে লজঞ্জুস আনতে বলেছিলে, দাদা সেই টাকায় ফুলের তোড়া কিনে এনেছে—তাতেই আমি একটু হাত দিয়েছিলেম বলেই অমনি আমাকে মেরেছে।

 সুকুমারী। তোমরা মায়ে পোয় মিলে আমার ছেলের সঙ্গে লেগেছ বুঝি? ওকে তোমাদের সহ্য হচ্ছে না। ও গেলেই তোমরা বাঁচ। আমি তাই বলি, খোকা রোজ ডাক্তার-ক’বরাজের বোতল-বোতল ওষুধ গিলছে, তব, দিন-দিন এমন রোগা হচ্ছে কেন। ব্যাপারখানা আজ বোঝা গেল।

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ

 সতীশ। আমি তোমার কাছে বিদায় নিতে এসেছি, নেলি।

 নলিনী। কেন, কোথায় যাবে।

 সতীশ। জাহান্নমে।

 নলিনী। সে জায়গায় যাবার জন্য কি বিদায় নেবার দরকার হয়। যে লোক সন্ধান জানে সে তো ঘরে বসেই সেখানে যেতে পারে। আজ তোমার মেজাজটা এমন কেন। কলারটা বুঝি ঠিক হাল ফ্যাশানের হয় নি!

 সতীশ। তুমি কি মনে কর আমি কেবল কলারের কথাই দিনরাত্রি চিন্তা করি।

 নলিনী। তাই তো মনে হয়। সেইজন্যই তো হঠাৎ তোমাকে অত্যন্ত চিতশীলের মতো দেখায়।

 সতীশ। ঠাট্টা কোরো না নেলি, তুমি যদি আজ আমার হদয়টা দেখতে পেতে—

 নলিনী। তা হলে ডুমুরের ফল এবং সাপের পাঁচ পাও দেখতে পেতাম।