চোরাই ধন
৭৮১
সুনেত্রা কোনো উত্তর না ক’রে আমাকে জড়িয়ে ধরলে।
আমি বললেম, “সব দঃখ-দুর্লক্ষণের চেয়ে ভালোবাসাই যে বড়ো, আমাদের জীবনে তার কি প্রমাণ হয় নি।”
“নিশ্চয়, নিশ্চয় হয়েছে।”
“মনে করো, যদি গ্রহের অনুগ্রহে তোমার আগেই আমার মৃত্যু হয়, সেই ক্ষতি কি বেঁচে থাকতেই আমি পূরণ করতে পারি নি।”
“থাক্ থাক্, আর বলতে হবে না।”
“সাবিত্রীর কাছে সত্যবানের সঙ্গে এক দিনের মিলনও যে চিরবিচ্ছেদের চেয়ে বড়ো ছিল, তিনি তো ভয় করেন নি মৃত্যুগ্রহকে।”
চুপ করে রইল সুনেত্রা। আমি বললেম, “তোমার অরুণা ভালোবেসেছে শৈলেনকে, এইটুকু জানা যথেষ্ট; বাকি সমস্তই থাক্ অজানা, কী বল, সুনি।”
সুনেত্রা কোনো উত্তর করলে না।
“তোমাকে যখন প্রথম ভালোবেসেছিলুম, বাধা পেয়েছি। আমি সংসারে দ্বিতীয়বার সেই নিষ্ঠুর দুঃখ আসতে দেব না কোনো গ্রহেরই মন্ত্রণায়। ওদের দুজনের ঠিকুজির অঙ্ক মিলিয়ে সংশয় ঘটতে দেব না কিছুতেই।”
ঠিক সেই সময়েই সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শোনা গেল। শৈলেন নেমে চলে যাচ্ছে। সুনেত্রা তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে বললে, “কী বাবা শৈলেন! এখনি তুমি যাচ্ছ নাকি।”
শৈলেন ভয়ে ভয়েই বললে, “কিছু দেরি হয়েই গেছে, ঘড়ি ছিল না, বুঝতে পারি নি।”
সুনেত্রা বললে, “না, কিছু দেরি হয় নি। আজ রাতে তোমাকে এখানেই খেয়ে যেতে হবে।”
একেই তো বলে প্রশ্রয়।
সেই রাত্রে আমার ঠিকুজি-সংশোধনের সমস্ত বিবরণ সুনেত্রাকে শোনালেম। সে বলে উঠল, “না বললেই ভালো করতে।”
“কেন।”
“এখন থেকে কেবলই ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে।”
“কিসের ভয়। বৈধব্যযোগের?”
অনেকক্ষণ চুপ করে রইল সুনি। তার পর বললে, “না, করব না ভয়। আমি যদি তোমাকে ফেলে আগে চলে যাই তা হলে আমার মৃত্যু হবে দ্বিগুণ মৃত্যু।