পাতা:গল্পগুচ্ছ (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪২
গল্পগুচ্ছ

 সতীশ। তোমাকে তো দিই নি, মেসোমশায়। এ মাসিমার ঋণশোধ। তোমার ঋণ কোনো কালে শোধ করতে পারব না।

 শশধর। কী সুকু, এ টাকাগুলো—

 সুকুমারী। গুনে খাতাঞ্চির হাতে দাও-না—ওইখানেই কি ছড়ানো পড়ে থাকবে।

 শশধর। সতীশ, খেয়ে এসেছ তো?

 সতীশ। বাড়ি গিয়ে খাব।

 শশধর। অ্যাাঁ, সে কী কথা। বেলা যে বিস্তর হয়েছে। আজ এইখানেই খেয়ে যাও।

 সতীশ। আর খাওয়া নয়, মেসোমশায়। এক দফা শোধ করলেম, অন্ন-ঋণ আবার নতন করে ফাঁদতে পারব না।

প্রস্থান

 সুকুমারী। বাপের হাত হতে রক্ষা করে এতদিন ওকে খাইয়ে-পরিয়ে মানুষ করলেম, আজ হাতে দু-পয়সা আসতেই ভাবখানা দেখেছ! কৃতজ্ঞতা এমনিই বটে! ঘোর কলি কিনা।

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ

 সতীশ। বড়োসাহেব হিসাবের খাতাপত্র কাল দেখবেন। মনে করেছিলেম, ইতিমধ্যে ‘গানি’র টাকাটা নিশ্চয় পাওয়া যাবে, তহবিল পুরণ করে রাখব—কিন্তু বাজার নেমে গেল। এখন জেল ছাড়া গতি নেই। ছেলেবেলা হতে সেখানে যাবারই আয়োজন করা গেছে।

 কিন্তু, অদৃষ্টকে ফাঁকি দেব। এই পিস্তলে দুটি গুলি পুরেছি—এই যথেষ্ট। নেলি— না না, ও নাম নয়, ও নাম নয়—আমি তা হলে মরতে পারব না। যদি বা সে আমাকে ভালোবেসে থাকে, সে ভালোবাসা আমি ধূলিসাৎ করে দিয়ে এসেছি। চিঠিতে আমি তার কাছে সমস্তই কবুল করে লিখেছি। এখন পৃথিবীতে আমার কপালে যার ভালোবাসা বাকি রইল সে আমার এই পিস্তল। আমার অন্তিমের প্রেয়সী, ললাটে তোমার চুম্বন নিয়ে চক্ষু মুদব।

 মেসোমশায়ের এ বাগানটি আমারই তৈরি। যেখানে যত দুর্লভ গাছ পাওয়া যায় সব সংগ্রহ করে এনেছিলেম। ভেবেছিলেম, এ বাগান একদিন আমারই হবে। ভাগ্য কার জন্য আমাকে দিয়ে এই গাছগুলো রোপণ করে নিচ্ছিল, তা আমাকে তখন বলে নি—তা হোক্, এই ঝিলের ধারে এই বিলাতি স্টিফানোটিস লতার কুঞ্জে আমার এ জন্মের হাওয়া-খাওয়া শেষ করব—মত্যুর দ্বারা আমি এ বাগান দখল করে নেব—এখানে হাওয়া খেতে আসতে আর কেউ সাহস করবে না।

 মেসোমশায়কে প্রণাম করে পায়ের ধুলো নিতে চাই। পৃথিবী হতে ওই ধুলোটুকু নিয়ে যেতে পারলে আমার মৃত্যু সার্থক হ’ত। কিন্তু, এখন সন্ধ্যার সময় তিনি মাসিমার কাছে আছেন—আমার এ অবস্থায় মাসিমার সঙ্গে দেখা করতে আমি সাহস করি নে। বিশেষত পিস্তল ভরা আছে।

 মরবার সময় সকলকে ক্ষমা করে শান্তিতে মরার উপদেশ শাস্ত্রে আছে। কিন্তু,