পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sé0 গল্পগুচ্ছ নবীন গভীর মখে একটখানি ভাবিয়া কহিল, “তাই তো দেখিতেছি। ঠিক বটে।” আবার খানিকক্ষণ ভাবিয়া বলিল, “ঠিক, ঠিক।” পবেই বলিয়াছি আমার ভালোবাসার মধ্যে একটি কাতর সংকোচ ছিল, তাই নিজের জবানিতে কোনোমতে লিখিতে পারিলাম না। নবীনকে পদার মতো মাঝখানে রাখিয়া তবেই আমার লেখনী মুখ খলিতে পারিল। লেখাগুলো যেন রসে ভরিয়া উত্তাপে ফাটিয়া উঠিতে লাগিল । নবীন বলিল, “এ তো তোমারই লেখা। তোমারই নামে বাহির করি।” আমি কহিলাম, “বিলক্ষণ। এ তোমারই লেখা, আমি সামান্য একটা বদল করিয়াছি মাত্র।” ক্ৰমে নবীনেরও সেইরূপ ধারণা জন্মিল। জ্যোতিবিদ যেমন নক্ষত্রোদয়ের অপেক্ষায় আকাশের দিকে তাকাইয়া থাকে আমিও যে তেমনি মাঝে মাঝে আমাদের পাশের বাড়ির বাতায়নের দিকে চাহিয়া দেখিতাম, সে কথা অস্বীকার করিতে পারি না। মাঝে মাঝে ভক্তের সেই ব্যাকুল দটিক্ষেপ সাথকও হইত। সেই কমযোগনিরতা ব্ৰহাচারিণীর সৌম্য মুখশ্ৰী হইতে শান্তনিখ জ্যোতি প্রতিবিম্বিত হইয়া মহেতের মধ্যে আমার সমস্ত চিত্তক্ষোভ দমন করিয়া দিত। কিন্তু সেদিন সহসা এ কী দেখিলাম। আমার চন্দ্রলোকেও কি এখনও অগ্ন্যুৎপাত আছে। সেখানকার জনশন্য সমাধিমণ্ডন গিরিগুহার সমস্ত বহ্নিদাহ এখনও সম্পর্ণে নিবাণ হইযা যায় নাই কি । সেদিন বৈশাখ মাসের অপরাহ্লে ঈশান কোণে মেঘ ঘনাইয়া আসিতেছিল। সেই আসন্ন ঝঞ্জার মেঘবিচ্ছুরিত রদ্রদীপ্তিতে আমার প্রতিবেশিনী জানালায় একাকিনী দড়িাইয়া ছিল। সেদিন তাহার শনানিবিষ্ট ঘনকৃষ্ণ দটির মধ্যে কী সদরপ্রসারিত নিবিড় বেদনা দেখিতে পাইলাম। আছে, আমার ঐ চন্দ্রলোকে এখনও উত্তাপ আছে! এখনও সেখানে উষ্ণ নিশ্বাস সমীরিত। দেবতার জন্য মানুষ নহে, মানুষের জন্যই সে। তাহার সেই দলটি চক্ষর বিশাল ব্যাকুলতা সেদিনকার সেই ঝড়ের আলোকে ব্যগ্র পাখির মতো উড়িয়া চলিয়াছিল। বগের দিকে নহে, মানবহন্দয়নীড়ের দিকে। সেই উৎসক আকাঙ্ক্ষা-উদ্দীপত দটিপাতটি দেখার পর হইতে অশান্ত চিত্তকে সস্থির করিয়া রাখা আমার পক্ষে দুঃসাধ্য হইল। তখন কেবল পরের কাঁচা কবিতা সংশোধন করিয়া তৃপিত হয় না—একটা যে-কোনোপ্রকার কাজ করিবার জন্য চঞ্চলতা জন্মিল। তখন সংকল্প করিলাম, বাংলাদেশে বিধবাবিবাহ প্রচলিত করিবার জন্য আমার সমস্ত চেটা প্রয়োগ করিব। কেবল বস্তৃতা ও লেখা নহে, অথসাহায্য করিতেও অগ্রসর হইলাম। নবীন আমার সঙ্গে তক করিতে লাগিল ; সে বলিল, “চিরবৈধব্যের মধ্যে একটি পবিত্র শান্তি আছে, একাদশীর ক্ষীণ জ্যোৎস্নালোকিত সমবিভূমির মতো একটি বিরাট রমণীয়তা আছে ; বিবাহের সম্ভাবনামায়েই কি সেটা ভাঙিয়া যায় না।” এ-সব কবিত্বের কথা শুনিলেই আমার রাগ হইত। দভিক্ষে যে লোক জীৰ্ণ হইয়া মরিতেছে তাহার কাছে আহারপটে লোক যদি খাদ্যের স্থলেত্বের প্রতি ঘণা