পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নস্টনীড় 8《 তাহাদের সংকলিপত বাগানে এই আমড়াতলার চার দিক কীভাবে বাঁধাইতে হইবে অমল একটি ছোটো কোদাল লইয়া তাহারই দাগ কাটিতেছিল—এমন সময় চার গাছের ছায়ায় বসিয়া বলিল, “অমল, তুমি যদি লিখতে পারতে তা হলে বেশ হত।” অমল জিজ্ঞাসা করিল, “কেন বেশ হত।” চার । তা হলে আমাদের এই বাগানের বর্ণনা করে তোমাকে দিয়ে একটা গল্প লেখাতুম। এই ঝিল, এই হরিণের ঘর, এই আমড়াতলা, সমস্তই তাতে থাকত— আমরা দুজনে ছাড়া কেউ বুঝতে পারত না, বেশ মজা হত। অমল, তুমি একবার লেখবার চেষ্টা করে দেখো-না, নিশ্চয় তুমি পারবে । অমল কহিল, “আচ্ছা, যদি লিখতে পারি তো আমাকে কী দেবে।” চার কহিল, “তুমি কী চাও।” অমল কহিল, “আমার মশারির চালে আমি নিজে লতা একে দেব, সেইটে তোমাকে আগাগোড়া রেশম দিয়ে কাজ করে দিতে হবে।” চার কহিল, “তোমার সমস্ত বাড়াবাড়ি। মশারির চালে আবার কাজ ।” মশারি জিনিসটাকে একটা শ্রীহীন কারাগারের মতো করিয়া রাখার বিরুদ্ধে অমল অনেক কথা বলিল। সে কহিল, সংসারের পনেরো-আনা লোকের যে সৌন্দৰ্যবোধ নাই এবং কুগ্ৰীতা তাহাদের কাছে কিছুমাত্র পীড়াকর নহে, ইহাই তাহার প্রমাণ । চার সে কথা তৎক্ষণাৎ মনে মনে মানিয়া লইল এবং ‘আমাদের এই দলটি লোকের নিভূত কমিটি যে সেই পনেরো-আনার অন্তগত নহে? ইহা মনে করিয়া সে খুশি হইল। কহিল, “আচ্ছা বেশ, আমি মশারির চাল তৈরি করে দেব, তুমি লেখো।” অমল রহস্যপণভাবে কহিল, “তুমি মনে কর, আমি লিখতে পারি নে?” দেখাও।” অমল। আজ থাক, বউঠান। চার্য। না, আজই দেখাতে হবে- মাথা খাও, তোমার লেখা নিয়ে এসো গে। চারকে তাহার লেখা শোনাইবার অতিব্যগ্রতাতেই অমলকে এতদিন বাধা দিতেছিল। পাছে চার না বোঝে, পাছে তাহার ভালো না লাগে, এ সংকোচ সে তাড়াইতে পারিতেছিল না। আজ খাতা আনিয়া একটুখানি লাল হইয়া, একটুখানি কাশিয়া, পড়িতে আরম্ভ করিল। চার গাছের গড়িতে হেলান দিয়া ঘাসের উপর পা ছড়াইয়া শুনিতে লাগিল। প্রবন্ধের বিষয়টা ছিল ‘আমার খাতা। অমল লিখিয়াছিল-‘হে আমার শত্র খাতা, আমার কল্পনা এখনওঁ তোমাকে পশ করে নাই। সতিকাগহে ভাগ্যপরাষ প্রবেশ করিবার প্বে শিশর ললাটপট্রের ন্যায় তুমি নিম’ল, তুমি রহস্যময়। যেদিন তোমার শেষ পাঠার শেষ ছত্রে উপসংহার লিখিয়া দিব সেদিন আজ কোথায়। তোমার এই শত্র শিশপত্রগুলি সেই চিরদিনের জন্য মসীচিহিত সমাপ্তির কথা আজ বনেও কল্পনা করিতেছে না – ইত্যাদি অনেকখানি লিখিয়াছিল। চার তরচ্ছোয়ায় বসিয়া তবধ হইয়া শুনিতে লাগিল। পড়া শেষ হইলে ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া কহিল, “তুমি আবার লিখতে পার না।”