পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○:OS。 গল্পগুচ্ছ যতীন। না না, একটা-কণী দন্টেমি তোমার মাথায় আসিয়াছে। আমি এখন নড়িতেছি না। পটল। আচ্ছা, তবে এইখানেই বোসো।—বলিয়া সে প্রতপদে প্রস্থান করিল। পরিচয় দেওয়া যাক। যতীন এবং পটলের বয়সের একদিন মাত্র তারতম্য। পটল যতীনের চেয়ে একদিনের বড়ো বলিয়া যতীন তাহার প্রতি কোনোপ্রকার সামাজিক সম্মান দেখাইতে নারাজ। উভয়ে খড়তুত-জাঠতুত ভাইবোন। বরাবর একত্রে খেলা করিয়া আসিয়াছে। দিদি বলে না বলিয়া পটল যতীনের নামে বাল্যকালে বাপখড়ার কাছে অনেক নালিশ করিয়াছে, কিন্তু কোনো শাসনবিধির বারা কোনো ফল পায় নাই— একটিমাত্র ছোটো ভাইয়ের কাছেও তাহার পটল-নাম ঘুচিল না। পটল দিব্য মোটাসোটা গোলগাল, প্রফুল্লতার রসে পরিপণ। তাহার কৌতুকহাস্য দমন করিয়া রাখে, সমাজে এমন কোনো শক্তি ছিল না। শাশুড়ির কাছেও সে কোনোদিন গাম্ভীয* অবলম্বন করিতে পারে নাই। প্রথম প্রথম তা লইয়া অনেক কথা উঠিয়াছিল। কিন্তু, শেষকালে সকলকেই হার মানিয়া বলিতে হইল— ওর ঐরকম। তার পরে এমন হইল যে, পটলের দনিবার প্রফুল্লতার আঘাতে গরজনদের গাম্ভীৰ্য ধালিসাৎ হইয়া গেল। পটল তাহার আশেপাশে কোনোখানে মন-ভার মাখ-ভার দশিচন্তা সহিতে পারিত না-অজস্র গল্প-হাসি-ঠাট্টায় তাহার চারি দিকের হাওয়া যেন বিদ্যুৎশক্তিতে বোঝাই হইয়া থাকিত। পটলের স্বামী হরকুমারবাব ডেপটি ম্যাজিস্ট্রেট– বেহার-অঞ্চল হইতে বদলি হইয়া কলিকাতায় আবকারি-বিভাগে পথান পাইয়াছেন। প্লেগের ভয়ে বালিতে একটি বাগানবাড়ি ভাড়া লইয়া থাকেন, সেখান হইতে কলিকাতায় যাতায়াত করেন। অবকারিপরিদর্শনে প্রায়ই তাঁহাকে মফস্বলে ফিরিতে হইবে বলিয়া দেশ হইতে মা এবং অন্য দই-একজন আত্মীয়কে আনিবার উপক্ৰম করিতেছেন, এমন সময় ডাক্তারিতে নতনউত্তীণ পসারপ্রতিপত্তিহীন যতীন বোনের নিমন্ত্রণে হপতাখানেকের জন্য এখানে আসিয়াছে। কলিকাতার গলি হইতে প্রথম দিন গাছপালার মধ্যে আসিয়া যতীন ছায়াময় নিজন বারান্দায় ফাগনমধ্যাহের রসালস্যে আবিষ্ট হইয়া বসিয়া ছিল, এমন সময়ে পর্বকথিত সেই উপদ্রব আরম্ভ হইল। পটল চলিয়া গেলে আবার খানিকক্ষণের জন্য সে নিশিচন্ত হইয়া একটখানি নড়িয়া-চড়িয়া বেশ আরাম করিয়া বসিল-কাঠকুড়ানি মেয়ের প্রসঙ্গে ছেলেবেলাকার রপেকথার অলিগলির মধ্যে তাহার মন ঘরিয়া বেড়াইতে লাগিল। এমন সময় আবার পটলের হাসিমাখা কণ্ঠের কাকলিতে সে চমকিয়া উঠিল । পটল আর-একটি মেয়ের হাত ধরিয়া সবেগে টানিয়া আনিয়া যতীনের সমখে পথাপন করিল; কহিল, “ও কুড়ান!” भार्याप्ले कश्लि, “कौ, मिनि।” পটল। আমার এই ভাইটি কেমন দেখ দেখি। মেয়েটি অসংকোচে যতীনকে দেখিতে লাগিল। পটল কহিল, “কেমন, ভালো দেখিতে না ?” so মেয়েটি গম্ভীরভাবে বিচার করিয়া ঘাড় নাড়িয়া কহিল, “হা, ভালো।”