পাতা:গল্পগুচ্ছ (প্রথম খণ্ড).djvu/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
স্বর্ণমৃগ
১৬১

জুতা, ছাতা, কাপড়; এবং প্রেয়সীর জন্য এসেন্স, সাবান, নূতন গল্পের বহি এবং সুবাসিত নারিকেলতৈল।

 মেঘমুক্ত আকাশে শরতের সূর্যকিরণ উৎসবের হাস্যের মতো ব্যাপ্ত হইয়া পড়িয়াছে; পক্কপ্রায় ধান্যক্ষেত্র থরথর করিয়া কাঁপিতেছে; বর্ষাধৌত সতেজ তরুপল্পব নব শীতবায়ুতে সির্‌সির্‌ করিয়া উঠিতেছে এবং তসরের চায়নাকোট পরিয়া, কাঁধে একটি পাকানো চাদর ঝুলাইয়া, ছাতি মাথায়, প্রত্যাগত পথিকেরা মাঠের পথ দিয়া ঘরের মুখে চলিয়াছে।

 বৈদ্যনাথ বসিয়া বসিয়া তাই দেখেন এবং তাঁহার হৃদয় হইতে দীর্ঘনিশ্বাস উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠে। নিজের নিরানন্দ গৃহের সহিত বাংলাদেশের সহস্র গৃহের মিলনোৎসবের তুলনা করেন এবং মনে মনে বলেন, ‘বিধাতা কেন আমাকে এমন অকর্মণ্য করিয়া সৃজন করিয়াছেন।’

 ছেলেরা ভোরে উঠিয়াই প্রতিমা-নির্মাণ দেখিবার জন্য আদ্যানাথের বাড়ির প্রাঙ্গণে গিয়া হাজির হইয়াছিল। খাবার বেলা হইলে দাসী তাহাদিগকে বলপূর্বক গ্রেফতার করিয়া লইয়া আসিল। তখন বৈদ্যনাথ বসিয়া বসিয়া এই বিশ্বব্যাপী উৎসবের মধ্যে নিজের জীবনের নিস্ফলতা স্মরণ করিতেছিলেন। দাসীর হাত হইতে ছেলেদুটিকে উদ্ধার করিয়া কোলের কাছে ঘনিষ্ঠভাবে টানিয়া বড়োটিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “হাঁ রে অবু, এবার পুজোর সময় কী চাস বল্ দেখি।”

 অবিনাশ তৎক্ষণাৎ উত্তর করিল, “একটা নৌকো দিয়ো, বাবা।”

 ছোটোটিও মনে করিল, বড় ভাইয়ের চেয়ে কোনো বিষয়ে ন্যূন হওয়া কিছু নয়; কহিল, “আমাকেও একটা নৌকো দিয়ো, বাবা।”

 বাপের উপযুক্ত ছেলে! একটা অকর্মণ্য কারুকার্য পাইলে আর-কিছু চাহে না। বাপ বলিলেন, “আচ্ছা।”

 এ দিকে যথাকালে পূজার ছুটিতে কাশী হইতে মোক্ষর এক খুড়া বাড়ি ফিরিয়া আসিলেন। তিনি ব্যবসায়ে উকিল। মোক্ষদা কিছুদিন ঘন ঘন তাঁহার বাড়ি যাতায়াত করিলেন। অবশেষে একদিন স্বামীকে আসিয়া বলিলেন, “ওগো, তোমাকে কাশী যাইতে হইতেছে।”