পাতা:গল্পগুচ্ছ (প্রথম খণ্ড).djvu/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ছুটি
১৯৭

মাখনকে মেরেছিস।”

 ফটিক কহিল, “না, মারি নি।

 “ফের মিথ্যে কথা বলছিস।”

 কখ্‌খনো মারি নি। মাখনকে জিজ্ঞাসা করো।”

 মাখনকে প্রশ্ন করাতে মাখন আপনার পূর্ব নালিসের সমর্থন করিয়া বলিল, “হাঁ, মেরেছে।”

 তখন আর ফটিকের সহ্য হইল না। দ্রুত গিয়া মাখনকে এক সশব্দ চড় কষাইয়া দিয়া কহিল, “ফের মিথ্যে কথা!”

 মা মাখনের পক্ষ লইয়া ফটিককে সবেগে নাড়া দিয়া তাহার পৃষ্ঠে দুটা-তিনটা প্রবল চপেটাঘাত করিলেন। ফটিক মাকে ঠেলিয়া দিল।

 মা চীৎকার করিয়া কহিলেন, “অ্যাঁ, তুই আমার গায়ে হাত তুলিস!”

 এমন সময়ে সেই কাঁচাপাকা বাবুটি ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন, “কী হচ্ছে তোমাদের।”

 ফটিকের মা বিস্ময়ে আনন্দে অভিভূত হইয়া কহিলেন, “ওমা, এ যে দাদা, তুমি কবে এলে।” বলিয়া গড় করিয়া প্রণাম করিলেন।

 বহু দিন হইল দাদা পশ্চিমে কাজ করিতে গিয়াছিলেন। ইতিমধ্যে ফটিকের মার দুই সন্তান হইয়াছে, তাহারা অনেকটা বাড়িয়া উঠিয়াছে, তাহার স্বামীর মৃত্যু হইয়াছে, কিন্তু একবারও দাদার সাক্ষাৎ পায় নাই। আজ বহুকাল পরে দেশে ফিরিয়া আসিয়া বিশ্বম্ভরবাবু তাঁহার ভগিনীকে দেখিতে আসিয়াছেন।

 কিছুদিন খুব সমারোহে গেল। অবশেষে বিদায় লইবার দুই-একদিন পূর্বে বিশ্বম্ভরবাবু তাঁহার ভগিনীকে ছেলেদের পড়াশুনা এবং মানসিক উন্নতি সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলেন। উত্তরে ফটিকের অবাধ্য উচ্ছৃঙ্খলতা, পাঠে অমনোযোগ, এবং মাখনের সুশান্ত সুশীলতা ও বিদ্যানুরাগের বিবরণ শুনিলেন।

 তাঁহার ভগিনী কহিলেন, “ফটিক আমার হাড় জ্বালাতন করিয়াছে।”

 শুনিয়া বিশ্বম্ভর প্রস্তাব করিলেন, তিনি ফটিককে কলিকাতায় লইয়া গিয়া নিজের কাছে রাখিয়া শিক্ষা দিবেন।

 বিধবা এ প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হইলেন।