পাতা:গল্পগুচ্ছ (প্রথম খণ্ড).djvu/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৪৮
গল্পগুচ্ছ

 হরসুন্দরী হতবুদ্ধি স্বামীকে কহিল, “তালা ভাঙিয়া ফেলোনা।”

 শৈলবালা প্রশান্তমুখে বলিল, “তাহা হইলে আমি গলায় দড়ি দিয়া মরিব।”

 নিবারণ কহিল, “আমি আর-একটা চেষ্টা দেখিতেছি।” বলিয়া এলোথেলো বেশে বাহির হইয়া গেল।

 নিবারণ দুই ঘণ্টার মধ্যেই পৈতৃক বাড়ি আড়াই হাজার টাকায় বিক্রয় করিয়া আসিল।

 বহু কষ্টে হাতে বেড়িটা বাঁচিল, কিন্তু চাকরি গেল। স্থাবর-জঙ্গমের মধ্যে রহিল কেবল দুটিমাত্র স্ত্রী। তাহার মধ্যে ক্লেশকাতর বালিকা স্ত্রীটি গর্ভবতী হইয়া নিতান্ত স্থাবর হইয়াই পড়িল। গলির মধ্যে একটি ছোটো স্যাঁৎসেঁতে বাড়িতে এই ক্ষুদ্র পরিবার আশ্রয় গ্রহণ করিল।


ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

 ছোটোবউয়ের অসন্তোষ এবং অসুখের আর শেষ নাই। সে কিছুতেই বুঝিতে চায় না তাহার স্বামীর ক্ষমতা নাই। ক্ষমতা নাই যদি তে বিবাহ করিল কেন।

 উপরের তলায় কেবল দুটিমাত্র ঘর। একটি ঘরে নিবারণ ও শৈলবালার শয়নগৃহ। আর-একটি ঘরে হরসুন্দরী থাকে। শৈলবালা খুঁৎখুঁৎ করিয়া বলে, “আমি দিনরাত্রি শোবার ঘরে কাটাইতে পারি না।”

 নিবারণ মিথ্যা আশ্বাস দিয়া বলিত, “আমি আর-একটা ভালো বাড়ির সন্ধানে আছি, শীঘ্র বাড়ি বদল করিব।”।

 শৈলবালা বলিত, “কেন, ওই তো পাশে আর-একটা ঘর আছে।”

 শৈলবালা তাহার পূর্ব-প্রতিবেশিনীদের দিকে কখনো মুখ তুলিয়া চাহে নাই। নিবারণের বর্তমান দুরবস্থায় ব্যথিত হইয়া তাহারা এক দিন দেখা করিতে আসিল; শৈলবালা ঘরে খিল দিয়া বসিয়া রহিল, কিছুতেই দ্বার খুলিল না। তাহারা চলিয়া গেলে রাগিয়া, কাঁদিয়া, উপবাসী থাকিয়া, হিস্‌টিরিয়া করিয়া পাড়া মাথায় করিল। এমনতরো উৎপাত প্রায় ঘটিতে লাগিল।