>08 গল্পগুচ্ছ যোগমায়া ভাবিল, আ মরণ! পোড়াকপালি বলে কী।' কাদম্বিনী ধীরে ধীরে কহিল, “আমি কি তোমাদের কেহ । আমি কি এ পৃথিবীর । তোমরা হাসিতেছ, কাঁদিতেছ, ভালোবাসিতেছ, সবাই আপন আপন লইয়া আছ, আমি তো কেবল চাহিয়া আছি। তোমরা মানুষ, আর আমি ছায়া। বুঝিতে পারি না, ভগবান আমাকে তোমাদের এই সংসারের মাঝখানে কেন রাখিয়াছেন। তোমরাও ভয় কর পাছে তোমাদের হাসিখেলার মধ্যে আমি অমঙ্গল আনি— আমিও ববিয়া উঠিতে পারি না, তোমাদের সঙ্গে আমার কী সম্পক। কিন্তু, ঈশ্বর যখন আমাদের জন্য আর-কোনো পথান গড়িয়া রাখেন নাই, তখন কাজে-কাজেই বন্ধন ছিড়িয়া যায় তব তোমাদের কাছেই ঘুরিয়া ঘরিয়া বেড়াই।” এমনি ভাবে চাহিয়া কথাগলা বলিয়া গেল যে, ষোগমায়া কেমন একরকম করিয়া মোটের উপর একটা কী বুঝিতে পারিল, কিন্তু আসল কথাটা বুঝিল না, জবাবও দিতে পারিল না। দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করিতেও পারিল না। অত্যন্ত ভারগ্রন্সত গভীর ভাবে চলিয়া গেল। চতুর্থ পরিচ্ছেদ রাত্রি প্রায় যখন দশটা তখন শ্রীপতি রানীহাট হইতে ফিরিয়া আসিলেন। মনুষলধারে বষ্টিতে পথিবী ভাসিয়া যাইতেছে। ক্ৰমাগতই তাহার ঝর ঝর শব্দে মনে হইতেছে, বষ্টির শেষ নাই, আজ রাত্রিরও শেষ নাই। যোগমায়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কণী হইল।” শ্ৰীপতি কহিলেন, “সে অনেক কথা। পরে হইবে বলিয়া কাপড় হাড়িয়া আহার করিলেন এবং তামাক খাইয়া শুইতে গেলেন। ভাবটা অত্যন্ত চিন্তিত । যোগমায়া অনেক ক্ষণ কৌতুহল দমন কবিয়া ছিলেন, শষ্যায় প্রবেশ করিয়াই জিজ্ঞাসা করিলেন, “কণী শুনিলে, বলো।” শ্রীপতি কহিলেন, “নিশ্চয় তুমি একটা ভুল করিয়াছ।” শনিবামাত্র যোগমায়া মনে-মনে ঈষৎ রাগ করিলেন। ভুল মেয়েবা কখনোই করে না; যদি-বা করে কোনো সবেুদ্ধি পরেষের সেটা উল্লেখ করা কতব্য হয় না, নিক্তের ঘাড় পাতিয়া লওয়াই সমযক্তি। যোগমায়া কিঞ্চিৎ উষ্ণভাবে কহিলেন, “কিরকম শানি।” শ্ৰীপতি কহিলেন, “যে সীলোকটিকে তোমার ঘরে স্থান দিলছ নে তোমাব সই কাদম্বিনী নহে।” এমনতরো কথা শুনিলে সহজেই রাগ হইতে পাবে-- বিশেষত নিজের সলামীর মুখে শুনিলে তো কথাই নাই। যোগমায়া কহিলেন, "আমার সইকে আমি চিনি না, তোমার কাছ হইতে চিনিয়া লইতে হইবে— কী কথার শ্ৰী।” শ্ৰীপতি বঝোইলেন, এ পথলে কথার শ্ৰী লইয়া কোনোরপে তক হইতেছে না, প্রমাণ দেখিতে হইবে। যোগমায়ার সই কাদম্বিনী যে মারা গিয়াছে তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই। যোগমায়া কহিলেন, “ওই শোনো। তুমি নিশ্চয় একটা গোল পাকাইয়া আসিয়াছ ।
