পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সবৰ্ণমাগ సి ఏరి কিন্তু তাহাতে হতভাগ্য বৈদ্যনাথ কেবল চোখের জলে ভাসিয়া যাইত, কাশী যাইবার নাম করিত না । দিন-দুই-তিন গেল। বৈদ্যনাথ বসিয়া বসিয়া কতকগলা কাষ্ঠখণ্ড কাটিয়া, কুদিয়া, জোড়া দিয়া, দইখানি খেলনার নৌকা তৈরি করিলেন। তাহাতে মাতুল বসাইলেন, কাপড় কাটিয়া পাল আটিয়া দিলেন, লাল শালরে নিশান উড়াইলেন, হাল ও দড়ি বসাইয়া দিলেন ; একটি পর্তুল কর্ণধার এবং আরোহীও ছাড়িলেন না। তাহাতে বহ যত্ন এবং আশ্চর্য নিপুণতা প্রকাশ করিলেন। সে নৌকা দেখিয়া অসহ্য চিত্তচাঞ্চল্য না জন্মে এমন সংযতচিত্ত বালক সম্প্রতি পাওয়া দলেভ। অতএব, বৈদ্যনাথ সপ্তমীর পরবরাত্রে যখন নৌকাদটি লইয়া ছেলেদের হাতে দিলেন, তাহারা আনন্দে নাচিয়া উঠিল। একে তো নৌকার খোলটাই যথেস্ট, তাহাতে আবার হাল আছে, দাঁড় আছে, মাতুল আছে, পাল আছে, আবার যথাস্থানে মাঝি বসিয়া, ইহাই তাহদের সমধিক বিসময়ের কারণ হইল । ছেলেদের আনন্দকলরবে আকৃষ্ট হইয়া মোক্ষদা আসিয়া দরিদ্র পিতার প্রজার উপহার দেখিলেন । দেখিয়া, রাগিয়া কাদিয়া কপালে করাঘাত করিয়া খেলেনাদটো কাড়িয়া জানলার বাহিরে ছ:ড়িয়া ফেলিয়া দিলেন। সোনার হার গেল, সাটিনের জামা গেল, জরির টপি গেল, শেষে কিনা হতভাগ্য মনুষ্য দুইখানা খেলেনা দিয়া নিজের ছেলেকে প্রতারণা করিতে আসিয়াছে " তাও আবার দুই পয়সা ব্যয় নাই, নিজের হাতে নিমাণ ! ছোটো ছেলে তো উধত্বশবাসে কাঁদিতে লাগিল। ‘বোকা ছেলে বলিয়া তাহাকে মোক্ষদা ঠাস করিয়া চড়াইয়া দিলেন । বড়ো ছেলেটি বাপের মুখের দিকে চাহিয়া নিজের দুঃখ ভুলিয়া গেল । উল্লাসের ভানমাত্র করিয়া কহিল, “বাবা, আমি কাল ভোরে গিয়ে কুড়িয়ে নিয়ে আসব।” বৈদ্যনাথ তাহার পরদিন কাশী যাইতে সম্মত হইলেন। কিন্তু, টাকা কোথায় । তাঁহার সতী গহনা বিক্ৰয় করিয়া টাকা সংগ্ৰহ করিলেন। বৈদ্যুনাথের পিতামহীর আমলের গহনা, এমন খটি সোনা এবং ভারী গহনা আজকালকার দিনে পাওয়াই মায় না । বৈদ্যুনাথের মনে হইল তিনি মরিতে যাইতেছেন। ছেলেদের কোলে করিয়া, চুকন করিয়া সাশ্রনেত্রে বাড়ি হইতে বাহির হইলেন। তখন মোক্ষদাও কাঁদিতে লাগিলেন । শাশীর বাড়িওয়ালা বৈদ্যুনাথের খড়শবশরের মক্কেল। বোধ করি সেই কারণেই বাড়ি খুব চড়া দামেই বিক্রয় হইল। বৈদ্যনাথ একাকী বাড়ি দখল করিয়া বসিলেন। একেবারে নদীর উপরেই বাড়ি । ভিত্তি ধৌত করিয়া নদীস্রোত প্রবাহিত হইতেছে। রাত্রে বৈদ্যনাথের গা ছমছম করিতে লাগিল। শান্য গহে শিয়রের কাছে প্রদীপ নোলাইয়া চাদর মুড়ি দিয়া শয়ন করিলেন। কিন্তু, কিছুতেই নিদ্রা হয় না। গভীর রাত্রে যখন সমস্ত কোলাহল থামিয়া গেল তখন কোথা হইতে একটা ঝন ঝন শব্দ শুনিয়া বৈদ্যনাথ চমকিয়া উঠিলেন। শব্দ মদ কিন্তু পরিকার। যেন পাতালে বলিরাজের ভাণ্ডারে কোষাধ্যক্ষ বসিয়া বসিয়া টাকা গণনা করিতেছে। じf