পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>>8 গল্পগুচ্ছ বৈদ্যুনাথের মনে ভয় হইল, কৌতুহল হইল, এবং সেইসঙ্গে দজোয় আশার সঞ্চার হইল। কম্পিত হতে প্রদীপ লইয়া ঘরে ঘরে ফিরিলেন। এ ঘরে গেলে মনে হয়, শব্দ ও ঘর হইতে আসিতেছে ; ও ঘরে গেলে মনে হয়, এ ঘর হইতে আসিতেছে। বৈদ্যনাথ সমস্ত রাত্রি কেবলই এ-ঘর ও-ঘর করিলেন। দিনের বেলা সেই পাতালভেদী শব্দ অন্যান্য শব্দের সহিত মিশিয়া গেল, আর তাহাকে চিনা গেল না। রাত্রি দই-তিন প্রহরের সময় যখন জগৎ নিদ্রিত হইল তখন আবার সেই শব্দ জাগিয়া উঠিল। বৈদ্যুনাথের চিত্ত নিতান্ত অসিথর হইল। শব্দ লক্ষ্য করিয়া কোন দিকে যাইবেন, ভাবিয়া পাইলেন না। মরুভূমির মধ্যে জলের কল্লোল শোনা যাইতেছে, অথচ কোন দিক হইতে আসিতেছে নিণয় হইতেছে না; ভয় হইতেছে, পাছে একবার ভুল পথ অবলম্বন করিলে গন্ত নিঝরিণী একেবারে আয়ত্তের অতীত হইয়া যায়। তৃষিত পথিক স্তবধভাবে দাঁড়াইয়া প্রাণপণে কান খাড়া করিয়া থাকে, এ দিকে তৃষ্ণা উত্তরোত্তর প্রবল হইয়া উঠে— বৈদ্যনাথের সেই অবস্থা হইল । বহুদিন অনিশ্চিত অবস্থাতেই কাটিয়া গেল। কেবল অনিদ্রা এবং ব্যথা আশ্বাসে তাঁহার সন্তোষসিনগধ মুখে ব্যগ্রতার তীব্রভাব রেখাঙ্কিত হইয়া উঠিল। কোটরনিবিষ্ট চকিত নেত্ৰে মধ্যাহ্নের মরবোলকোর মতো একটা জবালা প্রকাশ পাইল । অবশেষে একদিন বিপ্রহরে সমস্ত বার রন্ধ করিয়া ঘরের মেঝেময় শাবল ঠকিয়া শব্দ করিতে লাগিলেন। একটি পাশববতী ছোটো কুঠরির মেঝের মধ্য হইতে ফাঁপা আওয়াজ দিল । রাত্রি নিষপত হইলে পর বৈদ্যনাথ একাকী বসিয়া সেই মেঝে খনন কলিতে লাগিলেন। যখন রাত্রি প্রভাতপ্রায় তখন ছিদ্রখনন সম্পণে হইল । বৈদ্যনাথ দেখিলেন, নীচে একটা ঘরের মতো আছে– কিন্তু সেই রাত্রর অন্ধকারে তাহার মধ্যে নিবিচারে পা নামাইয়া দিতে সাহস করিলেন না । গতের উপর বিচনা চাপা দিয়া শয়ন করিলেন। কিন্তু, শব্দ এমনি পরিসফট হইয়া উঠিল যে, ভয় সেখান হইতে উঠিয়া আসিলেন– অথচ গহে অরক্ষিত রাখিয়া বার ছাড়িয়া দরে যাইতে ও প্রবত্তি হইল না। লোভ এবং ভয় দই দিক হইতে দুই হাত ধরিয়া টানিতে লাগিল । রাত কাটিয়া গেল । আজ দিনের বেলাও শব্দ শুনা যায়। ভূত্যকে ঘরের মধ্যে ঢুকিতে না দিয়া বাহিরে আহারাদি করিলেন। আহারান্তে ঘরে ঢকিয়া বারে চাবি লগাইয়া দিলেন। দগর্ণনাম উচ্চারণ করিয়া গহবরমুখ হইতে বিছানা সরাইয়া ফেলিলেন। জলের ছলছল এবং ধাতুদ্রব্যের ঠংঠং খাব পরিকার শনা গেল। ভয়ে ভয়ে গতের কাছে আস্তে আস্তে মুখ লইয়া গিয়া দেখিলেন, অন ত-উচ্চ কক্ষের মধ্যে জলের স্রোত প্রবাহিত হইতেছে— অন্ধকারে আর বিশেষ কিছু দেখিতে পাইলেন না। একটা বড়ো লাঠি নামাইয়া দেখিলেন জল এক-হটির অধিক নহে। একটি দিয়াশলাই ও বাতি লইয়া সেই অগভীর গহের মধ্যে অনায়াসে লাফাইয়া পড়িলেন। পাছে এক মহেনতে সমস্ত আশা নিবিয়া যায় এইজন্য বাতি জনালাইতে হাত কপিতে লাগিল। অনেকগুলি দেশালাই নষ্ট করিয়া অবশেষে বাতি জলিল। দেখিলেন, একটি মোটা লোহার শিকলিতে একটি বাহং তাঁবার কলসী বাঁধা