পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ミbf গল্পগুচ্ছ রাত্রি অনেক হইল। শেখর তাঁহার ঘরের সমস্ত বাতায়ন খলিয়া দিলেন। তিনি “ষে যে ফল ভালোবাসিতেন সন্ধ্যাবেলা বাগান হইতে সংগ্ৰহ করিয়া আনিয়াছিলেন। সবগুলি সাদা ফল— জুই বেল এবং গন্ধরাজ। তাহারই মঠো মঠা লইয়া নিম’ল বিছানার উপর ছড়াইয়া দিলেন। ঘরের চারি দিকে প্রদীপ জৱালাইলেন। তাহার পর মধর সঙ্গে একটা উদ্ভিদের বিষরস মিশাইয়া নিশ্চিন্তমখে পান করিলেন এবং ধীরে ধীরে আপনার শয্যায় গিয়া শয়ন করিলেন। শরীর অবশ এবং নেত্র মুদ্রিত হইয়া আসিল। নপের বাজিল। দক্ষিণের বাতাসের সঙ্গে কেশগুচ্ছের একটা সুগন্ধ ঘরে প্রবেশ করিল। কবি নিমীলিতনেত্ৰে কহিলেন, “দেবী ভক্তের প্রতি দয়া করিলে কি ! এত দিন পরে আজ কি দেখা দিতে আসিলে ।” একটি সমধর কন্ঠে উত্তর শুনিলেন, “কবি, আসিয়াছি।” শেখর চমকিয়া উঠিয়া চক্ষু মেলিলেন ; দেখিলেন শয্যার সম্মখে এক অপরাপ রমণীমতি । মৃত্যুসমাচ্ছন্ন বাপাকুল নেত্ৰে স্পষ্ট করিয়া দেখিতে পাইলেন না। মনে হইল, মখের দিকে সিথরনেত্ৰে চাহিয়া আছে। রমণী কহিলেন, “আমি রাজকন্যা অপরাজিতা।” কবি প্রাণপণে উঠিয়া বসিলেন । রাজকন্যা কহিলেন, “রাজা তোমার সুবিচার করেন নাই। তোমারই জয় হইয়াছে, কবি, তাই আমি আজ তোমাকে জয়মাল্য দিতে আসিয়াছি।” বলিয়া অপরাজিতা নিজের কন্ঠ হইতে সবহস্তরচিত পাপমালা খালিয়া কবির গলায় পরাইয়া দিলেন। মরণাহত কবি শয্যার উপরে পড়িয়া গেলেন। কাতিক ১২৯১