পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఏరి 8 গল্পগুচ্ছ কহিলাম, “কী রে রহমত, কবে আসিলি।” সে কহিল, “কাল সন্ধ্যাবেলা জেল হইতে খালাস পাইয়াছি।” কথাটা শনিয়া কেমন কানে খট করিয়া উঠিল। কোনো খনীকে কখনো প্রত্যক্ষ দেখি নাই, ইহাকে দেখিয়া সমস্ত অন্তঃকরণ যেন সংকুচিত হইয়া গেল। আমার ইচ্ছা করিতে লাগিল, আজিকার এই শভেদিনে এ লোকটা এখান হইতে গেলেই ভালো হয়। আমি তাহাকে কহিলাম, "আজ আমাদের বাড়িতে একটা কাজ আছে, আমি কিছ ব্যস্ত আছি, তুমি আজ যাও।” কথাটা শনিয়াই সে তৎক্ষণাৎ চলিয়া যাইতে উদ্যত হইল, অবশেষে দরজার কাছে গিয়া একটা ইতস্তত করিয়া কহিল, "খৌখাঁকে একবার দেখিতে পাইব না ?” তাহার মনে বঝি বিশ্বাস ছিল, মিনি সেই ভাবেই আছে। সে যেন মনে করিয়াছিল, মিনি আবার সেই পবের মতো কাবলিওয়ালা, ও কাবুলিওয়ালা করিয়া ছটিয়া আসিবে, তাহদের সেই অত্যন্ত কৌতুকাবহ পরাতন হাস্যালাপের কোনোরপে ব্যত্যয় হইবে না। এমনকি, পববন্ধত্ব সমরণ করিযা সে এক-বাক্স অাঙবে এবং কাগজের মোড়কে কিঞ্চিৎ কিসমিস বাদাম বোধ করি কোনো স্বদেশীয বন্ধর নিকট হইতে চাহিয়া-চিন্তিয়া সংগ্ৰহ করিয়া আনিয়াছিল—তাহার সে নিজের ঝুলিটি আর ছিল না। আমি কহিলাম, "আজ বাড়িতে কাজ আছে, আজ আর কাহারও সহিত দেখা হইতে পারিবে না।” সে যেন কিছু ক্ষম হইল। সতৰধভাবে দাঁড়াইয়া একবার সিথর দটিতে আমার মখের দিকে চাহিল, তার পরে বাব সেলাম বলিয়া বারের বাহির হইয়া গেল। আমার মনে কেমন একট ব্যথা বোধ হইল। মনে করিতেছি তাহাকে ফিরিয়া ডাকিব, এমন সময়ে দেখি সে আপনি ফিরিয়া আসিতেছে। কাছে আসিয়া কহিল, "এই আঙর এবং কিঞ্চিৎ কিসমিস বাদাম খেখিীর জন্য আনিয়াছিলাম, তাহাকে দিবেন।” আমি সেগুলি লইয়া দাম দিতে উদ্যত হইলে সে হঠাৎ আমার হাত চাপিয়া ধরিল; কহিল, “আপনার বহুৎ দয়া, আমার চিরকাল সমরণ থাকিবে—আমাকে পয়সা দিবেন না।—বাব, তোমার যেমন একটি লড়কী আছে, তেমনি দেশে আমারও একটি লড়কী আছে। আমি তাহারই মন্থখানি মরণ করিয়া তোমার খোঁখাঁর জন্য কিছু কিছ: মেওয়া হাতে লইয়া আসি, আমি তো সওদা করিতে আসি না।” এই বলিয়া সে আপনার মস্ত ঢিলা জামাটার ভিতর হাত চালাইয়া দিয়া বকের কাছে কোথা হইতে এক-টকরা ময়লা কাগজ বাহির করিল। বহু সযত্নে ভাঁজ খলিয়া দুই হস্তে আমার টেবিলের উপর মেলিয়া ধরিল। দেখিলাম, কাগজের উপর একটি ছোটো হাতের ছাপ। ফোটোগ্রাফ নহে, তেলের ছবি নহে, হাতে খানিকটা ভুষা মাখাইয়া কাগজের উপরে তাহার চিহ্ন ধরিয়া লইয়াছে। কন্যার এই সমরণচিহ্নটুকু বকের কাছে লইয়া রহমত প্রতি বৎসর কলিকাতার রাস্তার মেওয়া বেচিতে আসে–যেন সেই সকোমল ক্ষুদ্র শিশহস্তটকুর পশখানি তাহার বিরাট বিরহী বক্ষের মধ্যে সাধাসঞ্চার করিয়া রাখে। দেখিয়া আমার চোখ ছলছল করিয়া আসিল। তখন সে যে একজন কাবলি