পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>8bf গল্পগুচ্ছ প্রথম পরিচ্ছেদ মহামায়া এবং রাজীবলোচন উভয়ে নদীর ধারে একটা ভাঙা মন্দিরে সাক্ষাৎ করিল। মহামায়া কোনো কথা না বলিয়া তাহার স্বাভাবিক গভীর দষ্টি ঈষৎ ভংসনার ভাবে রাজীবের প্রতি নিক্ষেপ করিল। তাহার মম" এই "তুমি কী সাহসে আজ অসময়ে আমাকে এখানে আহবান করিয়া আনিয়াছ । আমি এপর্যন্ত তোমার সকল কথা শুনিয়া আসিতেছি বলিয়াই তোমার এতদর সপধা বাড়িয়া উঠিয়াছে ? রাজীব একে মহামায়াকে বরাবর ঈষৎ ভয় করিয়া চলে, তাহাতে এই দষ্টিপাতে তাহাকে ভারি বিচলিত করিয়া দিল— দটা কথা গছোইয়া বলিবে মনে করিয়াছিল, সে আশায় তৎক্ষণাৎ জলাঞ্জলি দিতে হইল। অথচ অবিলম্বে এই মিলনের একটা কোনো-কিছ কারণ না দেখাইলেও চলে না, তাই দ্রুত বলিয়া ফেলিল, “আমি প্রস্তাব করিতেছি, এখান হইতে পালাইয়া গিয়া আমরা দুজনে বিবাহ করি।”— রাজীবের যে কথাটা বলিবার উদ্দেশ্য ছিল সে কথাটা ঠিক বলা হইল বটে, কিন্তু যে ভূমিকাটি মনে মনে সিথর করিয়া আসিয়াছিল তাহার কিছুই হইল না। কথাটা নিতান্ত নীরস নিরলংকার, এমনকি অদভুত শনিতে হইল। নিজে বলিয়া নিজে থতমত খাইয়া গেল— আরও দুটো-পাঁচটা কথা জড়িয়া ওটাকে যে বেশ একট নরম করিয়া আনিবে তাহার সামথা রহিল না । ভাঙা মন্দিবে নদীর ধাবে এই মধ্যাহ্নকালে মহানায়াকে ডাকিয়া আনিযা নিবোধ লোকটা শধে কেবল বলিল, "চলো, আমরা বিবাহ করি গে!” মহামায়া কুলীনের ঘরের কুমারী। বয়স চব্বিশ বৎসর। যেমন পরিপণ বয়স, তেমনি পরিপণ সৌন্দৰ্য ৷ যেন শরৎকালের রৌদ্রেব মতো কাঁচা সোনার প্রতিমা— সেই রৌদ্রের মতোই দীপ্ত এবং নীরব, এবং তাহার দটি দিবালোকের ন্যায় উন্মুক্ত এবং নিভীক । তাহার বাপ নাই, বড়ো ভাই আছেন— তাঁহার নাম ভবানীচরণ চট্টোপাধ্যায়। ভাইবোন প্রায় এক প্রকৃতির লোক— মুখে কথাটি নাই, কিন্তু এমনি একটা তেজ আছে যে দিবা বিপ্রহরের মতো নিঃশব্দে দহন করে। লোকে ভবানীচরণকে অকারণে ভয় করিত। রাজীব লোকটি বিদেশী। এখানকার রেশমের কুঠির বড়োসাহেব তাহাকে নিজের সঙ্গে লইয়া আসিয়াছে। রাজীবের বাপ এই সাহেবের কর্মচারী ছিলেন : তাঁহার মৃত্যু হইলে সাহেব তাঁহার অল্পবয়স্ক পত্রের ভরণপোষণের ভার নিজে লইয়া তাহাকে বাল্যাবস্থায় এই বামনহাটির কুঠিতে লইয়া আসেন। বালকের সঙ্গে কেবল তাহার স্নেহশীলা পিসি ছিলেন। ইহারা ভবানীচরণের প্রতিবেশীরাপে বাস করিতেন। মহামায়া রাজীবের বাল্যসঙ্গিনী ছিল এবং রাজীবের পিসির সহিত মহামায়ার সদঢ় স্নেহবন্ধন ছিল। রাজীবের বয়স ক্লমে ক্ৰমে ষোলো, সতেরো, আঠারো, এমনকি উনিশ হইয়া উঠিল, তথাপি পিসির বিস্তর অনুরোধ সত্ত্বেও সে বিবাহ করিতে চায় না। সাহেব বাঙালির ছেলের এরপে অসামান্য সবধির পরিচয় পাইয়া ভারি খুশি হইলেন; মনে করিলেন,