পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S&8 গল্পগুচ্ছ দানপ্রতিদান বড়োগিন্নি যে কথাগলা বলিয়া গেলেন তাহার ধার যেমন তাহার বিষও তেমনি। যে হতভাগিনীর উপর প্রয়োগ করিয়া গেলেন তাহার চিত্তপত্তেলি একেবারে জনলিয়া জলিয়া লটিতে লাগিল। বিশেষত, কথাগলা তাহার স্বামীর উপর লক্ষ করিয়া বলা— এবং স্বামী রাধাম কুন্দ তখন রাত্রের আহার সমাপন করিয়া অনতিদরে বসিয়া তাবলের সহিত তাম্রকটধম সংযোগ করিয়া খাদ্যপরিপাকে প্রবত্ত ছিলেন। কথাগুলো শ্রতিপথে প্রবেশ করিয়া তাঁহার পরিপাকের যে বিশেষ ব্যাঘাত করিল এমন বোধ হইল না। অবিচলিত গাভীয্যের সহিত তাম্রকট নিঃশেষ করিয়া অভ্যাসমত যথাকালে শয়ন করিতে গেলেন। কিন্তু, এরপ অসামান্য পরিপাকশক্তি সকলের নিকটে প্রত্যাশা করা যাইতে পারে না। রাসমণি আজ শযনগহে আসিয়া স্বামীর সহিত এমন ব্যবহার করিল যাহা ইতিপবে সে কখনো করিতে সাহস করে নাই। অন্যদিন শান্তভাবে শয্যায় প্রবেশ করিয়া নীরবে স্বামীর পদসেবায় নিযুক্ত হইত, আজ একেবারে সবেগে কঙ্কণঝংকার করিয়া স্বামীর প্রতি বিমুখ হইয়া বিছানার এক পাশে শইয়া পড়িল এবং ক্লন্দনাবেগে শয্যাতল কম্পিত করিযা তুলিল । রাধাম কুন্দ তৎপ্রতি মনোযোগ না দিয়া একটা প্রকাণ্ড পাশবালিশ অকিড়িয়া ধরিয়া নিদ্রাব চেষ্টা করিতে লাগিলেন। কিন্তু, তাঁহার এই ঔদাসীন্যে সীর অধৈৰ্য উত্তরোত্তর বাড়িয়া উঠিতেছে দেখিয়া অবশেষে মদগম্ভীব স্বরে জানাইলেন যে, তাঁহাকে বিশেষ কায* -বশত ভোরে উঠিতে হইবে, এক্ষণে নিদ্রা অবশ্যক । স্বামীর কন্ঠস্বরে রাসমণির ক্ৰন্দন আর বাধা মানিল না, মহেনতে উদবেলিত হইয়া উঠিল। রাধাম কুন্দ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কণী হইয়াছে।” রাসমণি উচ্ছসিত সবরে কহিলেন, “শোন নাই কি ” “শুনিয়াছি। কিন্তু, বউঠাকরনে একটা কথাও তো মিথ্যা বলেন নাই । আমি কি দাদার অস্নেই প্রতিপালিত নহি । তোমার এই কাপড়চোপড় গহনাপত্রে এ-সমস্ত আমি কি আমার বাপের কড়ি হইতে আনিয়া দিযাছি। যে খাইতে পরিতে দেয সে যদি দুটো কথা বলে তাহাও খাওয়াপরার সামিল করিয়া লইতে হয় " “এমন খাওয়াপরায় কাজ কণী ।” “বাঁচতে তো হইবে।” “মরণ হইলেই ভালো হয়।” “যতক্ষণ না হয় ততক্ষণ একট ঘনমাইবার চেষ্টা করো, আরাম বোধ করিলে।” বলিয়া রাধামকৃেন্দ উপদেশ ও দন্টাতের সামঞ্জস্যসাধনে প্রবত্ত হইলেন । রাধামকৃেন্দ ও শশিভূষণ সহোদর ভাই নহে, নিতান্ত নিকট-সম্পক’ও নয় : প্রায় গ্রাম-সম্পক বলিলেই হয়। কিন্তু, প্রতিবন্ধন সহোদর ভাইয়ের চেয়ে কিছু কম নহে। বড়েগিন্নি ব্রজসন্দরীর সেটা কিছ অসহ্য বোধ হইত। বিশেষত, শশিভূষণ