পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>○ 。 গল্পগুচ্ছ রাখাল-ছেলেদের সঙ্গে মিশিয়া নানাবিধ খেলা ফাদিত, এক বিছানায় শুইয়া স্তিমিত আলোকে মাসির নিকট গল্প শনিত, ঘরের লোককে লুকাইয়া রাত্রে দরে পল্লীতে যাত্রা শুনিতে যাইত এবং প্রাতঃকালে ধরা পড়িয়া অপরাধ এবং শাসিত উভয়ে সমান ভাগ করিয়া লইত— তখন কোথায় ছিল ব্রজসুন্দরী, কোথায় ছিল রাসমণি । জীবনের এতগুলো দিনকে কি এক দিনে বিচ্ছিন্ন করিয়া চলিয়া যাওয়া যায়। কিন্তু, এই বন্ধন যে সবাথপরতার বন্ধন, এই প্রগাঢ় প্রীতি ষে পরামপ্রত্যাশার সুচতুর ছদ্মবেশ, এরপে সন্দেহ, এরাপ আভাসমাত্র তাঁহার নিকট বিষতৃল্য বোধ হইত, অতএব আর কিছুদিন এরপ চলিলে কী হইত বলা যায় না। কিন্তু, এমন সময়ে একটা গরতর घप्लेना घम्नेिल । যে সময়ের কথা বলিতেছি তখন নিদিষ্ট দিনে স্যাস্তের মধ্যে গবমেন্টের খাজনা শোধ না করিলে জমিদারি সম্পত্তি নিলাম হইয়া যাইত। একদিন খবর আসিল, শশিভূষণের একমাত্র জমিদারি পরগনা এনাংশাহী লাটের খাজনার দায়ে নিলাম হইয়া গেছে। রাধাম কুন্দ তাঁহার স্বাভাবিক মদ প্রশান্তভাবে কহিলেন, “আমারই দোষ।” শশিভূষণ কহিলেন, "তোমার কিসের দোষ। তুমি তো খাজনা চালান দিয়াছিলে, পথে যদি ডাকাত পড়িয়া লুটিয়া লয়, তুমি তাহার কী করিতে পার।" দোষ কাহার এক্ষণে তাহা সিথর করিতে লসিয়া কোনো ফল নাই— এখন সংসার চালাইতে হইবে। শশিভূষণ হঠাৎ যে কোনো কাজকমে হাত দিবেন সেরুপ তাঁহার সবভাব ও শিক্ষা নহে। তিনি যেন ঘাটের বাঁধা সোপান হইতে পিছলিয়া এক মহতুতে’ ডুবজলে গিয়া পড়িলেন । প্রথমেই তিনি সত্রীর গহনা বন্ধক দিতে উদ্যত হইলেন । রাধাম কুল এক থলে টাকা সম্মখে ফেলিয়া তাহাতে বাধা দিলেন। তিনি পরেই নিজ দীর গহন বন্ধক রাখিয়া যথোপযুক্ত অথ সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন। সংসারে একটা এই মহৎ পরিবতন দেখা গেল, সম্পংকালে গঠণী যাহাকে দর করিবার সহস্ৰ চেষ্টা করিয়াছিলেন বিপংকালে তাহাকে বাকলভাবে অবলম্বন করিয়া ধরিলেন। এই সময় দুই ভ্রাতার মধ্যে কাহার উপরে অধিক লিভার করা যাইতে পারে তাহা বুঝিয়া লইতে তাঁহার বিলম্ব হইল না। কখনো যে রাধামকৃেন্দের প্রতি তাঁহার তিলমাত্র বিদ্বেষভাব ছিল এখন আর তাহা প্রকাশ পায় না। রাধামকৃেন্দ পাব হইতেই স্বাধীন উপাজনের জন্য প্রস্তুত হইয়াছিল। নিকটবতী শহরে সে মোক্তারি আরম্ভ করিয়া দিল। তখন মোন্ডারি ব্যবসায়ে মাযের পথ এখনকার অপেক্ষা বিস্তৃত ছিল এবং তীক্ষাবধি সাবধানী রাধামকৃেন্দ প্রথম হইতেই পসার জমাইয়া তুলিল। ক্ৰমে সে জেলার অধিকাংশ বড়ো বড়ো জমিদারের কার্যভার গ্রহণ করিল। এক্ষণে রাসমণির অবস্থা পাবের ঠিক বিপরীত। এখন রাসমণির স্বামীর অস্নেই শশিভূষণ এবং ব্রজসুন্দরী প্রতিপালিত। সে কথা লইয়া সে পট কোনো গব করিয়াছিল কি না জানি না, কিন্তু কোনো একদিন বোধ করি আভাসে ইঙ্গিতে ব্যবহারে সেই ভাব ব্যক্ত করিয়াছিল, বোধ করি দেমাকের সহিত পা ফেলিয়া এবং