পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৯২ গল্পগুচ্ছ পড়িতেছে। মনোহর না হইলেও সংক্ষেপবশত শুনিতে ধৈৰ্য চুতি না হইবার সম্পভাবনা – পথিবীতে একটি মহানদীর তীরে একটি মহারণ্য ছিল। সেই অরণ্যে এবং সেই নদীতীরে এক কাঠঠোকরা এবং একটি কাদাখোঁচা পক্ষী বাস করিত। ধরাতলে কীট যখন সলভ ছিল তখন ক্ষধানিবত্তিপবেক সন্তুটেচিত্তে উভয়ে ধরাধামের যশকাঁতন করিয়া পাটকলেবরে বিচরণ করিত। কালক্রমে, দৈবযোগে পথিবীতে কীট দাপ্রাপ্য হইয়া উঠিল। তখন নদীতীরস্থ কাদাখোঁচা শাখাসীন কাঠঠোকরাকে কহিল, “ভাই কাঠঠোকরা, বাহির হইতে অনেকের নিকট এই পৃথিবী নবীন শ্যামল সুন্দর বলিয়া মনে হয়, কিন্তু আমি দেখিতেছি ইহা আদ্যোপাত জীণ ।” এই অরণ্যকে সতেজ শোভন বলিয়া বিশ্বাস করে, কিন্তু আমি বলিতেছি, ইহা একেবারে অন্তঃ יין তখন উভয়ে মিলিয়া তাহাই প্রমাণ করিয়া দিতে কৃতসংকল্প হইল। কাদাখোঁচা নদীতীরে লম্ফ দিয়া, পৃথিবীর কোমল কদমে অনবরতই চঞ্চ বিদ্ধ কবিয়া বসন্ধেরার জীণতা নিদেশ করিতে লাগিল। এবং কাঠঠোকরা বনস্পতির কঠিন শাখায় বাববার চণ্ড আঘাত করিয়া অরণ্যের অন্তঃশন্যতা প্রচার করিতে প্রবৃত্ত হইল । বিধিবিড়ম্ববনায় উক্ত দুই অধ্যবসায়ী পক্ষী সংগীতবিদ্যায় বঞ্চিত। অতএব কোকিল যখন ধরাতলে নব নব বসন্তসমাগম পঞ্চম বরে ঘোষণা করিতে লাগিল, এবং শ্যামা যখন অরণ্যে নব নব প্রভাতোদয় কীৰ্তন করিতে নিযুক্ত রহিল, তখন এই দুই ক্ষধিত অসন্তুষ্ট ম্যক পক্ষী অশ্রান্ত উৎসাহে আপন প্রতিজ্ঞা পালন করিতে লাগিল । এ গল্প তোমাদের ভালো লাগিল না ? ভালো লাগিবার কথা নহে। কিন্তু, ইহার সবাপেক্ষা মহৎ গণ এই যে, পাঁচ-সাত প্যারাগ্রাফেই সম্পণে। এই গল্পটা যে পরাতন তাহাও তোমাদের মনে হইতেছে না ? তাহার কারণ, পথিবীর ভাগাদোষে এ গল্প অতিপরাতন হইযাও চিরকাল নতন রহিয়া গেল । বহ দিন হইতেই অকৃতজ্ঞ কাঠঠোকরা পথিবীর দঢ় কঠিন অমর মহত্ত্বের উপর ঠক ঠক শব্দে চণ্টপাত করিতেছে, এবং কাদাখোঁচা পথিবীর সরস উবর কোমলত্বের মধ্যে থচ খচ শব্দে চঞ্চ বিদ্ধ করিতেছে- আজও তাহার শেষ হইল না, মনের আক্ষেপ এখনও রহিয়া গেল। গল্পটার মধ্যে সংখদঃখের কথা কী আছে জিজ্ঞাসা করিতেছ? ইহার মধ্যে দুঃখের কথাও আছে, সখের কথাও আছে। দুঃখের কথা এই যে, পথিবী যতই উদার এবং অরণ্য যতই মহৎ হউক, ক্ষুদ্র চণ্য আপনার উপযুক্ত খাদ্য না পাইবামায় তাহাদিগকে আঘাত করিয়া আসিতেছে। এবং সখের বিষয় এই যে, তথাপি শত সহস্ৰ বৎসর পথিবী নবীন এবং অরণ্য শ্যামল রহিয়াছে। যদি কেহ মরে তো সে ওই দটি বিবেযবিষজজর হতভাগ্য বিহঙ্গ, এবং জগতে কেহ সে সংবাদ জানিতেও পায় না।