পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఏ సి 8 গল্পগুচ্ছ সমাপিত প্রথম পরিচ্ছেদ অপবীকৃষ্ণ বি. এ. পাস করিয়া কলিকাতা হইতে দেশে ফিরিয়া আসিতেছেন। নদীটি ক্ষুদ্র। বর্ষা-অন্তে প্রায় শকাইয়া যায়। এখন শ্রাবণের শেষে জলে ভরিয়া উঠিয়া একেবারে গ্রামের বেড়া ও বাঁশঝাড়ের তলদেশ চুম্বন করিয়া চলিয়াছে। বহুদিন ঘন বর্ষার পরে আজ মেঘমুক্ত আকাশে রৌদ্র দেখা দিয়াছে। নৌকায় আসীন অপবীকৃষ্ণের মনের ভিতরকার একখানি ছবি যদি দেখিতে পাইতাম তবে দেখিতাম, সেখানেও এই যুবকের মানসনদ নববর্ষায় কলে কলে ভরিয়া আলোকে জল জল এবং বাতাসে ছল ছল করিয়া উঠিতেছে। নৌকা যথাস্থানে ঘাটে আসিয়া লাগিল। নদীতীর হইতে অপবাদের বাড়ির পাকা ছাদ গাছের অন্তরাল দিয়া দেখা যাইতেছে। অপবর আগমনসংবাদ বাড়ির কেহ জানিত না, সেইজন্য ঘাটে লোক আসে নাই। মাঝি ব্যাগ লইতে উদ্যত হইলে অপর তাহাকে নিবারণ করিয়া নিজেই ব্যাগ হাতে লইয়া আনন্দভরে তাড়াতাড়ি নামিয়া পড়িল । নামিবামাত্র, তীরে ছিল পিছল, ব্যাগ-সমেত অপব কাদায় পড়িয়া গেল। যেমন পড়া অমনি কোথা হইতে এক সুমিষ্ট উচ্চ কণ্ঠে তরল হাসালহরী উচ্ছসিত হইয়া নিকটবতী অশথ গাছের পাখিগুলিকে সচকিত করিয়া দিল । অপব অত্যন্ত লজিত হইয়া তাড়াতাড়ি আত্মসম্বরণ করিয়া চাহিয়া দেখিল । দেখিল, তীরে মহাজনের নৌকা হইতে নতন ইস্ট রশিীকৃত করিয়া নামাইয়া রাখা হইয়াছে, তাহাবই উপরে বসিয়া একটি মেয়ে হাস্যাবেগে এখনি শতধা হইয়া যাইবে এমনি মনে হইতেছে । অপবর্গ চিনিতে পারিল, তাহাদেরই নতন প্রতিবেশিনীর মেসে দ,রে বড়ো নদীর ধারে ইহাদের বাড়ি ছিল, সেখানে নদীর ভাঙনে দেশ ত্যাগ ক1:য বছর দুই-তিন হইল এই গ্রামে আসিয়া বাস করিতেছে। এই মেয়েটির অখ্যাতির কথা অনেক শনিতে পাওয়া যায়। পষে গ্রামবাসীরা স্নেহভরে ইহাকে পাগলী বলে, কিন্তু গ্রামের গহিণীরা ইহাব উচ্ছsখল মকভাবে সবাদা ভীত চিন্তিত শঙ্কান্বিত । গ্রামের যত ছেলেদের সহিতই ইহার খেলা : সমবয়সী মেয়েদের প্রতি অবজ্ঞার সীমা নাই। শিশরোজ্যে এই মেযেটি একটি ছোটোখাটো বগির উপদ্রব বলিলেই হয়। বাপের আদরের মেয়ে কিনা, সেইজন্য ইহার এতটা দদাত প্রতাপ। এই সম্বন্ধে কখদের নিকট মন্ময়ীর মা স্বামীর বিরুদ্ধে সবাদা অভিযোগ করিতে ছাড়িত না: অথচ বাপ ইহাকে ভালোবাসে, বাপ কাছে থাকিলে মন্ময়ীর চোখের অশ্রুবিন্দ তাহার অন্তরে বড়োই বাজিত, ইহাই মনে করিয়া প্রবাসী স্বামীকে স্মরণ-পবাক মন্ময়ীর মা মেয়েকে কিছুতেই কাঁদাইতে পারিত না। মন্ময়ী দেখিতে শ্যামবর্ণ; ছোটো কোঁকড়া চুল পিঠ পর্যন্ত পড়িয়াছে। ঠিক যেন বালকের মতো মুখের ভাব। মস্ত মস্ত দটি কালো চক্ষতে না আছে লঙ্গা, না আছে ভয়, না আছে হাবভাবলীলার লেশমাত্র। শরীর দীর্ঘ পরিপন্ট, সন্থে, সবল, কিন্তু