পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミOa গল্পগুচ্ছ জাগিয়া উঠিয়া দেখিল, সে তাহার শ্বশুরবাড়িতে খাটে শ্যইয়া আছে। তাহাকে জাগ্রত দেখিয়া ঝি বকিতে আরম্ভ করিল। ঝির কন্ঠস্বরে শাশুড়ি আসিয়া অত্যন্ত কঠিন কঠিন করিয়া বলিতে লাগিলেন। মন্ময়ী বিসফারিতনেত্রে নীরবে তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। অবশেষে তিনি যখন তাহার বাপের শিক্ষাদোষের উপর কটাক্ষ করিয়া বলিলেন তখন মন্ময়ী দ্রতপদে পাশের ঘরে প্রবেশ করিয়া ভিতর হইতে শিকল বন্ধ করিয়া দিল। অপব লজার মাথা খাইয়া মাকে আসিয়া বলিল, “মা, বউকে দই-এক দিনের জন্যে একবার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে দোষ কী।” মা অপবকে ন ভূতো ন ভবিষ্যতি ভংসনা করিতে লাগিলেন, এবং দেশে এত মেয়ে থাকিতে বাছিয়া বাছিয়া এই অসিথদাহকারী দসা-মেয়েকে ঘরে আনার জন্য তাহাকে যথেস্ট গঞ্জনা করিলেন । পশ্চম পরিচ্ছেদ সেদিন সমস্ত দিন বাহিরে ঝড়বৃষ্টি এবং ঘরের মধ্যেও অনরুপ দ্যযোগ চলিতে লাগিল । তাহার পরদিন গভীর রাত্রে অপব মন্ময়ীকে ধীরে ধীরে জাগ্রত করিয়া কহিল, “মন্ময়ী, তোমার বাবার কাছে যাবে?” মন্ময়ী সবেগে অপবর হাত চাপিয়া ধরিয়া সচকিত হইয়া কহিল, "যাব।” অপব চুপিচুপি কহিল, "তবে এসো, আমরা দুজনে আস্তে আস্তে পালিয়ে যাই। আমি ঘাটে নৌকা ঠিক করে রেখেছি।" মন্ময়ী অত্যন্ত সকৃতজ্ঞ হাদয়ে একবার স্বামীর মুখের দিকে চাহিল। তাহার পর তাড়াতাড়ি উঠিয়া কাপড় ছাড়িয়া বাহির হইবার জন্য প্রস্তুত হইল। অপব তাহার মাতার চিন্তা দর করিবার জন্য একখানি পত্র রাখিয়া দুইজনে বাহির হইল । মন্ময়ী সেই অন্ধকার রাত্রে জনশন্য নিস্তব্ধ নিজন গ্রামপথে এই প্রথম লেচ্ছায় আন্তরিক নিভরের সহিত স্বামীর হাত ধরিল; তাহাব হৃদয়ের আনন্দ-উদ্বেগ সেই সমকোমল পশ'-যোগে তাহার স্বামীর শিরার মধ্যে সঞ্চবিত হইতে লাগিল । নৌকা সেই রাত্রেই ছাড়িয়া দিল। অশান্ত হর্ষে ছাস সত্ত্বেও অনতিবিলম্বেই মন্ময়ী ঘুমাইয়া পড়িল। পরদিন কী মুক্তি, কী আনন্দ । দুই ধারে কত গ্রাম বাজার শস্যক্ষেত্র বন, দই ধারে কত নৌকা যাতায়াত করিতেছে। মন্ময়ী প্রত্যেক তুচ্ছ বিষয়ে স্বামীকে সহস্রবার করিয়া প্রশ্ন করিতে লাগিল । ওই নৌকায় কী আছে, উহারা কোথা হইতে আসিয়াছে, এই জায়গার নাম কী, এমন-সকল প্রশন যাহার উত্তর অপব কোনো কলেজের বহিতে পায় নাই এবং যাহা তাহার কলিকাতার অভিজ্ঞতায় কুলাইয়া উঠে না। বন্ধগণ শনিয়া লজিত হইবেন, অপব এই-সকল প্রশ্নের প্রত্যেকটারই উত্তর করিয়াছিল এবং অধিকাংশ উত্তরের সহিত সত্যের ঐক্য হয় নাই। যথা, সে তিলের নৌকাকে তিসির নৌকা, পাঁচবেড়েকে রায়নগর এবং মনসেফের আদালতকে জমিদারি কাছারি বলিতে কিছমাত্র কুঠিত বোধ করে নাই। এবং এই-সমস্ত প্রান্ত উত্তরে বিশ্বস্তহাদয় প্রশ্নকারিণীর সন্তোষের তিলমাত্র ব্যাঘাত জন্মায় নাই।