পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাপিত ミO○ পরদিন সন্ধ্যাবেলায় নৌকা কুশীগঞ্জে গিয়া পেপছিল। টিনের ঘরে একখানি ময়লা চৌকা-কাঁচের লন্ঠনে তেলের বাতি জৱালাইয়া ছোটো ডেস্কের উপর একখানি চামড়ায়-বাঁধা মস্ত খাতা রাখিয়া গা-খোলা ঈশানচন্দ্র টলের উপর বসিয়া হিসাব লিখিতেছিলেন। এমন সময় নবদম্পতী ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। মন্ময়ী ডাকিল, "বাবা।" সে ঘরে এমন কন্ঠধনি এমন করিয়া কখনো ধৰনিত হয় নাই। ঈশানের চোখ দিয়া দরদের করিয়া আশ্রম পড়িতে লাগিল। সে কী বলিবে, কী করিবে কিছুই ভাবিয়া পাইল না। তাহার মেয়ে এবং জামাই যেন সাম্রাজ্যের যবেরাজ এবং যবেরাজমহিষী; এই-সমস্ত পাটের বস্তার মধ্যে তাহাদের উপযুক্ত সিংহাসন কেমন করিয়া নিমিতি হইতে পারে ইহাই যেন তাহার দিশাহারা বন্ধি ঠিক করিয়া উঠিতে পারিল না। তাহার পর আহারের ব্যাপার— সেও এক চিন্তা। দরিদ্র কেরানি নিজ হস্তে ডাল ভাতে-ভাত পাক করিয়া খায়— আজ এই এমন আনন্দের দিনে সে কী করবে, কাঁ খাওয়াইবে। মন্ময়ী কহিল, “বাবা, আজ আমরা সকলে মিলিয়া রধিব।” অপব’ এই প্রস্তাবে সাতিশয় উৎসাহ প্রকাশ করিল। ঘরের মধ্যে পথানাভাব লোকাভাব অন্নাভাব, কিন্তু ক্ষুদ্র ছিদ্র হইতে ফেয়ারা যেমন চতুগণে বেগে উত্থিত হয় তেমনি দারিদ্র্যের সংকীর্ণ মখ হইতে আনন্দ পরিপণ ধারায় উচ্ছসিত হইতে লাগিল । এমনি করিয়া তিন দিন কাটিল। দুই বেলা নিয়মিত স্টীমার আসিয়া লাগে, কত লোক, কত কোলাহল , সন্ধ্যাবেলায় নদীতীর একেবারে নিজান হইয়া যায়, তখন কী অবাধ স্বাধীনতা; এবং তিন জনে মিলিয়া নানাপ্রকার জোগাড় করিয়া, ভুল করিযা, এক করিতে আর-এক করিয়া তুলিয়া রাধাবাড়া । তারার পরে মন্ময়ীর বলযঝংকৃত স্নেহহন্তের পরিবেশনে শ্বশর-জামাতার একত্রে আহার এবং গহিণীপনার সহস্ৰ কটি প্রদর্শন -পবাক মন্ময়ীকে পরিহাস ও তাহা লইয়া বালিকার আনন্দকলহ এবং মৌখিক অভিমান। অবশেষে অপব জানাইল, আর অধিক দিন থাকা উচিত হয় না। মন্ময়ী করণস্বরে আরও কিছু দিন সময় প্রার্থনা করিল। ঈশান কহিল, “কাজ নাই ।” বিদায়ের দিন কন্যাকে লুকের কাছে টানিয়া তাহার মাথায় হাত রাখিয়া অশ্রগদগদকণ্ঠে ঈশান কহিল, “মা, তুমি বশরঘর উক্তল করিয়া লক্ষী হইয়া থাকিয়ে । কেত যেন আমার মিনর কোনো দোষ না ধরিতে পারে।” মন্ময়ী কাঁদতে কাঁদিতে স্বামীর সহিত বিদায় হইল। এবং ঈশান সেই বিগণে নিবনিন্দ সংকীর্ণ ঘরের মধ্যে ফিরিয়া গিয়া দিনের পর দিন, মাসের পর মাস নিয়মিত মাল ওজন করিতে লাগিল । যত পরিচ্ছেদ এই অপরাধীযগল গহে ফিরিয়া আসিলে মা অত্যন্ত গভীরভাবে রহিলেন, কোনো কথাই কহিলেন না। কাহারও ব্যবহারের প্রতি এমন কোনো দোষারোপ করিলেন না যাহা সে ক্ষালন করিতে চেষ্টা করিতে পারে। এই নীরব অভিযোগ,