পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমস্যাপারণ a>○ লাঠি হতে পাইক চলিয়াছে। কলরবে আকৃষ্ট হইয়া তিনি একবার হাট দেখিতে ইচ্ছুক হইলেন। হাটের মধ্যে প্রবেশ করিয়া বারী কলাকে কৌতুহলবশত তাহার আয়ব্যয় সম্বন্ধে প্রশ্ন করিতেছিলেন, এমন সময় অছিমন্দি কাটারি তুলিয়া বাঘের মতো গজন করিয়া বিপিনবাবরে প্রতি ছটিয়া আসিল। হাটের লোক তাহাকে অধ্যপথে ধরিয়া তৎক্ষণাৎ নিরসর করিয়া ফেলিল— অবিলবে তাহাকে পলিসের হস্তে অপশ করা হইল এবং আবার হাটে যেমন কেনা বেচা চলিতেছিল চলিতে লাগিল । বিপিনবাব এই ঘটনায় মনে মনে যে খুশি হন নাই তাহা বলা যায় না। আমরা যাহাকে শিকার করিতে চাহি সে যে আমাদিগকে থাবা মারিতে আসিবে এরপে বজাতি এবং বে-আদবি অসহ্য। যাহা হউক, বেটা যেরপে বদমায়েস সেইরাপ তাহার উচিত শাসিত হইবে । বিপিনের অন্তঃপরের মেয়েরা আজিকার ঘটনা শনিয়া কণ্টকিত হইয়া উঠিলেন। সকলেই বলিলেন, মা গো, কোথাকার বঙ্গজাত হারামজাদা বেটা।’ তাহার উচিত শাস্তির সম্পভাবনায় তাহারা অনেকটা সালস্ত্ৰনা লাভ করিলেন । এ দিকে সেই সন্ধ্যাবেলায় বিধবার অন্নহীন পত্রহীন গহ মৃত্যুর অপেক্ষাও অন্ধকার হইয়া গেল। এই ব্যাপারটা সকলেই ভুলিয়া গেল, আহারাদি করিল, শয়ন করিল, নিদ্রা দিল— কেবল একটি বন্ধার কাছে পৃথিবীর সমস্ত ঘটনার মধ্যে এইটাই সবাপেক্ষা বহৎ হইয়া উঠিল, অথচ ইহার সহিত যন্ধে করিবার জন্য সমস্ত পথিবীতে আর কেহই নাই, কেবল দীপহীন কুটিরপ্রান্তে কয়েকখানি জীণ অস্থি এবং একটি হতাশ্বাস ভীত হদয়। চতুর্থ পরিচ্ছেদ ইতিমধ্যে দিন তিনেক অতিবাহিত হইয়া গেছে। কাল ডেপুটি ম্যাজিসট্রেটের নিকট বিচারের দিন নিদিষ্ট হইয়াছে। বিপিনকেও সাক্ষ্য দিতে যাইতে হইবে। ইতিপবে: জমিদারকে কখনো সাক্ষ্যমঞ্চে দাঁড়াইতে হয় নাই, কিন্তু বিপিনের ইহাতে কোনো আপত্তি নাই । পরদিন যথাসময়ে পাগড়ি পরিয়া ঘড়ির চেন ঝালাইয়া পালিক চড়িয়া মহাসমারোহে বিপিনবাব কাছারিতে গিয়া উপস্থিত হইলেন। এজলাসে আজ আর লোক ধরে না। এতবড়ো হাজকে আদালতে অনেক দিন ঘটে নাই। যখন মকদ্দমা উঠিতে আর বড়ো বিলম্বব নাই, এমন সময় একজন বকদাজ আসিয়া বিপিনবাবরে কানে কানে কী একটা কথা বলিয়া দিল— তিনি তটস্থ হইয়া ‘আবশ্যক আছে বলিয়া বাহিরে চলিয়া আসিলেন। বাহিরে আসিয়া দেখিলেন, কিছর দরে এক বটতলায় তাঁহার বন্ধ পিতা দাঁড়াইয়া আছেন। খালি পা, গায়ে একখানি নামাবলি, হাতে হরিনামের মালা, কুশ শরীরটি যেন স্নিগ্ধ জ্যোতিমায়। ললাট হইতে একটি শান্ত কর্ণা বিশ্বে বিকীর্ণ হইতেছে। বিপিন চাপকন জোবা এবং অটি প্যাণ্টলন লইয়া কন্টে তাঁহাকে প্রণাম করিলেন।