পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S>8 গল্পগুচ্ছ মাথার পাগড়িটি নাসাপ্রান্তে নামিয়া আসিল, ঘড়িটি জেব হইতে বাহির হইয়া পড়িল। সেগুলি শশব্যতে সারিয়া লইয়া পিতাকে নিকটবতী উকিলের বাসায় প্রবেশ করিতে অনুরোধ করিলেন। কৃষ্ণগোপাল কহিলেন, “না, আমার যাহা বক্তব্য আমি এইখানেই বলিয়া লই।" বিপিনের অনচেরগণ কৌতুহলী লোকদিগকে দরে ঠেলিয়া রাখিল। কৃষ্ণগোপাল কহিলেন, “অছিম যাহাতে খালাস পায় সেই চেষ্টা করিতে হইবে এবং উহার যে সম্পত্তি কাড়িয়া লইয়াছ তাহা ফিরাইয়া দিবে।” বিপিন বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “এইজন্যই আপনি কাশী হইতে এত দরে আসিয়াছেন ? উহাদের পরে আপনার এত অধিক অনুগ্রহ কেন।” কৃষ্ণগোপাল কহিলেন, “সে কথা শুনিয়া তোমার লাভ কী হইবে, বাপ।" বিপিন ছাড়িলেন না; কহিলেন, “অযোগ্যতা বিচার করিয়া কত লোকের কত দান ফিরাইয়া লইয়াছি, তাহার মধ্যে কত ব্রাহরণও ছিল, আপনি তাহার কিছতে হস্তক্ষেপ করেন নাই— আর এই মসলমান-সন্তানের জন্য আপনার এত দরে পর্যন্ত অধ্যবসায় ! আজ এত কাণ্ড করিয়া অবশেষে যদি আছিমকে খালাস দিতে এবং সমস্ত ফিরাইয়া দিতে হয় তো লোকের কাছে কী বলিব ।” কৃষ্ণগোপাল কিয়ৎক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন। অবশেষে দ্রুতকশিপত অঙ্গলিতে মালা ফিরাইতে ফিরাইতে কিঞ্চিং কম্পিত সবরে কহিলেন, “লোকের কাছে যদি সমস্ত খালিয়া বলা আবশ্যক মনে কর তো বলিয়ো, অছিমন্দিন তোমার ভাই হয়, আমার পত্র।” বিপিন চমকিয়া উঠিয়া কহিলেন, “যবনীর গভে ?” কৃষ্ণগোপাল কহিলেন, "হাঁ, বাপ ।” বিপিন অনেক ক্ষণ সন্তব্ধভাবে থাকিয়া কহিলেন, “সে-সব কথা পরে হইবে, এখন আপনি ঘরে চলন।” কৃষ্ণগোপাল কহিলেন, “না, আমি তো আর গহে প্রবেশ করিব না। আমি এখনই এখান হইতে ফিরিয়া চলিলাম। এখন তোমার ধমে যাহা উচিত বোধ হয় করিয়ো ।” বলিয়া আশীবাদ করিয়া অশ্রীনিরোধ-পবেক কম্পিত-কলেবরে ফিরিয়া চলিলেন। বিপিন কী বলিবে কী করিবে ভাবিয়া পাইল না। চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। কিন্তু, এটুকু তাহার মনে উদয় হইল, সে কালের ধমনিষ্ঠা এইরুপই বটে। শিক্ষা ও চরিত্রে আপনাকে আপনার পিতার চেয়ে ঢের শ্রেষ্ঠ বোধ হইল। পিথর করিলেন, একটা প্রিন্সিপল না থাকার এই ফল। আদালতে যখন ফিরিলেন, দেখিলেন শীর্ণ ক্লিষ্ট শঙ্কে শ্বেত-ওঠাধর দীপ্তনেত্র অছিম দই পাহারাওয়ালার হস্তে বন্দী হইয়া একখানি মলিন চাঁর পরিয়া বাহিরে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে। সে বিপিনের ভ্ৰাতা! ডেপুটি ম্যাজিসট্রেটের সহিত বিপিনের বন্ধত্বে ছিল। মকদ্দমা একপ্রকার গোলমাল করিয়া ফাঁসিয়া গেল। এবং অছিমও অলপ দিনের মধ্যে পবর্ণবস্থা ফিরিয়া পাইল। কিন্তু তাহার কারণ সেও বকিতে পারিল না, অন্য লোকেও আশ্চর্য হইয়া গেল । মকদ্দমার সময় কৃষ্ণগোপাল আসিয়াছিলেন সে কথা রাষ্ট্ৰ হইতে বিলম্ব হইল