পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেঘ ও রৌদ্র 있을 বহ চেষ্টা করিল, কিন্তু কাঁদিল না। বরঞ্চ রক্তবর্ণ হইয়া ঘাড় বাঁকাইয়া উৎপীড়নকারীর পষ্ঠদেশে মুখ লুকাইয়া প্রচুর পরিমাণে হাসিতে লাগিল এবং যেন কেবলমাত্র বাহ্য আকর্ষণে নীত হইয়া পরাভূত বন্দীভাবে লৌহগরাদেবেষ্টিত কারাগারের মধ্যে প্রবেশ করিল। আকাশে মেঘরেীদের খেলা যেমন সামান্য, ধরাপ্রান্তে এই দলটি প্রাণীর খেলাও তেমনি সামান্য, তেমনি ক্ষণস্থায়ী। আবার আকাশে মেঘরেীদের খেলা যেমন সামান্য নহে এবং খেলা নহে, কিন্তু খেলার মতো দেখিতে মাত্র, তেমনি এই দলটি অখ্যাতনামা মনষ্যের একটি কম হীন বষাদিনের ক্ষুদ্র ইতিহাস সংসারের শত শত ঘটনার মধ্যে তুচ্ছ বলিয়া প্রতীয়মান হইতে পারে কিন্তু ইহা তুচ্ছ নহে। যে বন্ধ বিরাট অদৃষ্ট অবিচলিত গম্ভীরমুখে অনন্তকাল ধরিয়া যুগের সহিত যুগান্তর গথিয়া তুলিতেছে সেই বন্ধই বালিকার এই সকাল-বিকালের তুচ্ছ হাসিকান্নার মধ্যে জীবনব্যাপী সখেদুঃখের বীজ অঙ্কুরিত করিয়া তুলিতেছিল। তথাপি বালিকার এই অকারণ অভিমান বড়োই অর্থহীন বলিয়া বোধ হইল। কেবল দশকের কাছে নহে, এই ক্ষমদ্র নাট্যের প্রধান পাত্র উক্ত যুবকের নিকটেও। এই বালিকা কেন যে একদিন বা রাগ করে, একদিন বা অপরিমিত স্নেহ প্রকাশ করিতে থাকে, কোনোদিন বা দৈনিক বরাদ্দ বাড়াইয়া দেয়, কোনোদিন বা দৈনিক বরাদ্দ একেবারেই বন্ধ করে, তাহার কারণ খুজিয়া পাওয়া সহজ নহে। এক-একদিন যেন তাহার সমস্ত কপেন ভাবনা এবং নৈপুণ্য একত্র করিয়া যুবকের সন্তোষ-সাধনে প্রবত্ত হয় ; আবার এক-একদিন তাহার সমস্ত ক্ষুদ্র শক্তি, তাহার সমস্ত কাঠিন্য একত্র সংহত করিয়া তহিকে আঘাত করিতে চেষ্টা করে। বেদনা দিতে না পারিলে তাহার কাঠিন্য বিগণ বাড়িয়া উঠে: কৃতকায হইলে সে কাঠিন্য অনতাপের আশ্রজেলে শতধা বিগলিত হইয়া অজস্র স্নেহধারায় প্রবাহিত হইতে থাকে। - এই তুচ্ছ মেঘরৌদ্র-খেলার প্রথম তুচ্ছ ইতিহাস পরপরিচ্ছেদে সংক্ষেপে বিবত করা যাইতেছে । দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ গ্রামের মধ্যে আর সকলেই দলাদলি, চক্ৰান্ত, ইক্ষর চাষ, মিথ্যা মকদ্দমা এবং পাটের কারবার লইয়া থাকিত, ভাবের আলোচনা এবং সাহিত্যচর্চা করিত কেবল শশিভূষণ আর গিরিবালা । ইহাতে কাহারো ঔৎসকো বা উৎকন্ঠার কোনো বিষয় নাই। কারণ, গিরিবালার বয়স দশ এবং শশিভূষণ একটি সদ্যবিকশিত এম-এ বি-এল। উভয়ে প্রতিবেশী মাত্র। গিরিবালার পিতা হরকুমার এক কালে নিজগ্রামের পত্তনিদার ছিলেন। এখন দরবস্থায় পড়িয়া সমস্ত বিক্রয় করিয়া তাঁহাদের বিদেশী জমিদারের নায়েবি পদ গ্রহণ করিয়াছেন। যে পরগনায় তাঁহাদের বাস সেই পরগনারই নায়েবি, সতরাং তাঁহাকে জন্মস্থান হইতে নড়িতে হয় না। শশিভূষণ এম-এ পাস করিয়া আইনপরীক্ষায় উত্তীণ হইয়াছেন কিন্তু কিছতেই কোনো কমে ভিড়িলেন না। লোকের সঙ্গে মেশা বা সভাস্থলে দটো কথা বলা, সেও