পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেঘ ও রৌদ্র ২৩১ একে ব্রাহরণের জাত্যভিমান সাহেব-লোকের সহজেই অসহ্য বোধ হয়, তাহার উপর তাঁহার মেথরকে অপমান করিতে সাহস করিয়াছে, ইহাতে ধৈৰ্য রক্ষা করা তাহার পক্ষে অসম্ভব হইয়া উঠিল। তৎক্ষণাৎ চাপরাসিকে আদেশ করিলেন, “বোলাও নায়েবকো ।” নায়েব কম্পান্বিতকলেবরে দাগ নাম জপ করিতে করিতে সাহেবের তাবর সম্মুখে খাড়া হইলেন। সাহেব তাব হইতে মচমচ শব্দে বাহির হইয়া আসিয়া নায়েবকে উচ্চকণ্ঠে বিজাতীয় উচ্চারণে জিজ্ঞাসা করিলেন, “টমি কী কারণ-বশটো আমার মেঠরকে ডুর করিয়াছে ?” হরকুমার শশব্যস্ত হইয়া করজোড়ে জানাইলেন, সাহেবের মেথরকে দরে করিতে পারেন এমন পধা কখনোই তাঁহার সম্ভবে না; তবে কি না কুকুরের জন্য একেবারে চারি সের ঘি চাহিয়া বসাতে প্রথমে তিনি উক্ত চতুপদের মঙ্গলার্থে মন্দভাবে আপত্তি প্রকাশ করিয়া পরে ঘাত সংগ্ৰহ করিয়া আনিবার জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্থানে লোক পাঠাইয়াছেন। সাহেব জিজ্ঞাসা করিলেন, কাহাকে পাঠানো হইয়াছে এবং কোথায় পাঠানো হইয়াছে। হরকুমার তৎক্ষণাৎ যেমন মুখে আসিল নাম করিয়া দিলেন। সেই সেই নামীয় লোকগণ সেই সেই গ্রামে ঘাত আনিবার জন্য গিয়াছে কি না সন্ধান করিতে অতি সত্বর লোক পাঠাইয়া দিয়া সাহেব নায়েবকে তাম্বতে বসাইয়া রাখলেন। দতগণ অপরাহুে ফিরিয়া আসিয়া সাহেবকে জানাইল, ঘাত সংগ্রহের জন্য কেহ কোথাও যায় নাই। নায়েবের সমস্ত কথাই মিথ্যা এবং মেথর যে সত্য বলিয়াছে তাহাতে আর হাকিমের সন্দেহ রহিল না। তখন জয়েস্ট সাহেব ক্ৰোধে গজন করিয়া মেথরকে ডাকিয়া কহিলেন, “এই শ্যালকের কণা ধরিয়া তাবর চারি ধারে ঘোড়দৌড় করাও ।” মেথর আর কালবিলব না করিয়া চতুদিকে লোকারণের মধ্যে সাহেবের আদেশ পালন করিল। দেখিতে দেখিতে কথাটা ঘরে ঘরে রাষ্ট্র হইয়া গেল, হরকুমার গহে আসিয়া আহার ত্যাগ করিয়া মন্মষেবং পড়িয়া রহিলেন। জমিদারি কায উপলক্ষে নায়েবের শত্র বিস্তর ছিল: তাহারা এই ঘটনায় অত্যন্ত আনন্দলাভ করিল, কিন্তু কলিকাতায় গমনোদ্যত শশিভূষণ যখন এই সংবাদ শুনিলেন তখন তাঁহার সবঙ্গের রক্ত উত্তপত হইয়া উঠিল। সমস্ত রান্ত্রি তাঁহার নিদ্রা হইল না । পরদিন প্রাতে তিনি হরকুমারের বাড়িতে গিয়া উপস্থিত হইলেন : হরকুমার তাঁহার হাত ধরিয়া ব্যাকুলভাবে কাঁদতে লাগিলেন। শশিভূষণ কহিলেন, “সাহেবের নামে মানহানির মকদ্দমা আনিতে হইবে, আমি তোমার উকিল হইয়া লড়িব ।” স্বয়ং ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের নামে মকদ্দমা আনিতে হইবে শানিয়া হরকুমার প্রথমটা ভীত হইয়া উঠিলেন ; শশিভূষণ কিছুতেই ছাড়িলেন না। হরকুমার বিবেচনা করিতে সময় লইলেন। কিন্তু যখন দেখিলেন কথাটা চারি দিকে বাষ্ট্র হইয়াছে এবং শয়নগণ আনন্দ প্রকাশ করিতেছে তখন তিনি আর থাকিতে পারিলেন না, শশিভূষণের শরণাপন্ন হইলেন, কহিলেন, “বাপ শুনিলাম তুমি অকারণে কলিকাতায় যাইবার আয়োজন করিতেছ, সে তো কিছুতেই হইতে পারবে না। তোমার