পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেঘ ও রৌদ্র २०6 “যাঃও" বলিয়া তজন করিয়া পলায়নের উপক্ৰম করিত। জামের অটির অভাবে আজ তাহাকে একটা কৌশল অবলম্বন করিতে হইল। সহসা দরের দিকে দটিক্ষেপ করিয়া বালিকা উচ্চৈঃস্বরে বলিয়া উঠিল, “স্বর্ণ ভাই, তুই যাস নে, আমি এখনি श्वाधिह ।” পরষ পাঠক মনে করিতে পারেন যে, কথাটা বৰ্ণলতা-নামক কোনো দরবতিনী সঙ্গিনীকে লক্ষ্য করিয়া উচ্চারিত, কিন্তু পাঠিকারা সহজেই বুঝিতে পরিবেন দরে কেহই ছিল না, লক্ষ্য অত্যন্ত নিকট। কিন্তু হায়, অন্ধ পরেষের প্রতি সে লক্ষ্য ভ্ৰষ্ট হইয়া গেল। শশিভূষণ যে শুনিতে পান নাই তাহা নহে, তিনি তাহার মম গ্রহণ করিতে পারিলেন না। তিনি মনে করিলেন, বালিকা সত্যই ক্ৰীড়ার জন্য উৎসকে— এবং সেদিন তাহাকে খেলা হইতে অধ্যয়নে আকষণ করিয়া আনিতে তাঁহার অধ্যবসার ছিল না, কারণ তিনিও সেদিন কোনো কোনো হাদয়ের দিকে লক্ষ্য করিয়া তীক্ষ শর সন্ধান করিতেছিলেন। বালিকার ক্ষুদ্র হতের সামান্য লক্ষ্য যেমন ব্যথ হইয়াছিল তাহার শিক্ষিত হস্তের মহৎ লক্ষ্যও সেইরাপ ব্যথ হইয়াছিল, পাঠকেরা সে সংবাদ পবেই অবগত হইয়াছেন। জামের অটির একটা গণ এই যে, একে একে অনেকগুলি নিক্ষেপ করা যায়, চারিটি নিফল হইলে অন্তত পঞ্চমটি ঠিক পথানে গিয়া লাগিতে পারে। কিন্তু বর্ণ হাজার কাল্পনিক হউক, তাহাকে “এখনি যাচ্ছি” আশা দিয়া অধিকক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকা যায় না। থাকিলে সবণের অস্তিত্ব সম্প্রবন্ধে লোকের স্বভাবতই সন্দেহ জন্মিতে পারে । সুতরাং সে উপায়টি যখন নিম্ফল হইল তখন গিরিবালাকে অবিলম্বেব চলিয়া যাইতে হইল । তথাপি, স্বর্ণনানী কোনো দরস্থিত সহচরীর সংগ লাভ করিবার অভিলাষ আন্তরিক হইলে যেরপে সবেগে উৎসাহের সহিত পাদচারণা করা স্বাভাবিক হইত, গিরিবালার গতিতে তাহা লক্ষিত হইল না। সে যেন তাহার পাঠ দিয়া অনুভব করিবার চেষ্টা করিতেছিল পশ্চাতে কেহ আসিতেছে কি না ; যখন নিশ্চয় ব্যকিল কেহ আসিতেছে না তখন আশার শেষতম ক্ষীণতম ভগ্নাংশটুকু লইয়া একবার পশ্চাৎ ফিরিয়া চাহিয়া দেখিল, এবং কাহাকেও না দেখিয়া সেই ক্ষদ্র আশাটুকু এবং শিথিলপত্র চারপাঠখানি খণ্ড খণ্ড করিয়া ছিড়িয়া পথে ছড়াইয়া দিল। শশিভূষণ তাহাকে যে বিদ্যাটুকু iদয়াছে সেটুকু যদি সে কোনোমতে ফিরাইয়া দিতে পারিত তবে বোধ হয় পরিত্যাজ্য জামের অটির মতো সে-সমস্তই শশিভূষণের বারের সম্মখে সশব্দে নিক্ষেপ করিয়া দিয়া চলিয়া আসিত। বালিকা প্রতিজ্ঞা করিল, দ্বিতীয়বার শশিভূষণের সহিত দেখা হইবার পবেই সে সমস্ত পড়াশনা ভুলিয়া যাইবে, তিনি যে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিকেন তাহার কোনোটিরই উত্তর দিতে পারবে না ! একটি— একটি– একটিরও না ! তখন ! তখন শশিভূষণ অত্যন্ত জব্দ হইবে। গিরিবালার দুই চক্ষ জলে ভরিয়া আসিল। পড়া ভুলিয়া গেলে শশিভূষণের যে কিরুপ তীব্র অনন্তাপের কারণ হইবে তাহা মনে করিয়া সে পীড়িত হাদয়ে কিঞ্চিৎ সান্না লাভ করিল, এবং কেবলমাত্র শশিভূষণের দোষে বিস্মতশিক্ষা সেই হতভাগিনী ভবিষ্যৎ গিরিবালাকে কল্পনা করিয়া তাহার নিজের প্রতি করুণরস উচ্ছলিত হইয়া উঠিল। আকাশে মেঘ করিতে লাগিল; বর্ষাকালে এমন মেঘ প্রতিদিন করিয়া থাকে। গিরিবালা পথের প্রান্তে একটা গাছের আড়ালে দাঁড়াইয়া অভিমানে ফলিয়া ফলিয়া