পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রায়শিচত্ত ধ ૨8૧ সময় জ্বাসিল, পরীক্ষা দিলেন না, এবং তাহার পরবৎসর কালেজ ছাড়িয়া দিলেন। এই ঘটনায় সব সাধারণের সমক্ষে বিন্ধ্যবাসিনী অত্যন্ত কুষ্ঠিত হইয়া পড়িলেন। রাত্রে মদ বরে অনাথবন্ধকে বলিলেন, “পরীক্ষাটা দিলেই ভালো হত।” অনাথবন্ধ অবজ্ঞাভরে হাসিয়া কহিলেন, “পরীক্ষা দিলেই কি চতুভূজ হয় না কি । আমাদের কেদারও তো পরীক্ষায় পাস হইয়াছে!” বিন্ধ্যবাসিনী সানা লাভ করিলেন। দেশের অনেক গো-গদভ যে পরীক্ষায় পাস করিতেছে সে পরীক্ষা দিয়া অনাথবন্ধরে গৌরব কী আর বাড়িবে! প্রতিবেশিনী কমলা তাহার বাল্যসখী বিন্দিকে আনন্দ-সহকারে খবর দিতে আসিল যে, তাহার ভাই রমেশ এবার পরীক্ষায় উত্তীণ হইয়া জলপানি পাইতেছে । শনিয়া বিন্ধ্যবাসিনী অকারণে মনে করিল, কমলার এই আনন্দ বিশদ্ধে আনন্দ নহে, ইহার মধ্যে তাহার স্বামীর প্রতি কিঞ্চিৎ গঢ়ে শ্লেষ আছে। এইজন্য সখীর উল্লাসে উল্লাস প্রকাশ না করিয়া বরং গায়ে পড়িয়া কিঞ্চিৎ কগড়ার সরে শনাইয়া দিল যে, এল-এ পরীক্ষা একটা পরীক্ষার মধ্যেই গণ্য নহে; এমন কি বিলাতের কোনো কলেজে বি-এর নীচে পরীক্ষাই নাই। বলা বাহুল্য, এ-সমস্ত সংবাদ এবং যান্তি বিন্ধ্য স্বামীর নিকট হইতে সংগ্ৰহ করিয়াছে । কমলা সখসংবাদ দিতে আসিয়া সহসা পরমপ্রিয়তমা প্রাণসখীর নিকট হইতে এরপ আঘাত পাইয়া প্রথমটা কিছু বিস্মিত হইল। কিন্তু, সেও নাকি মীজাতীয় মনুষ্য, এইজন্য মহতীকালের মধ্যেই বিধাবাসিনীর মনের ভাব বুঝিতে পারিল এবং ভ্রাতার অপমানে তৎক্ষণাৎ তাহারও রসনাগ্রে একবিন্দ তীব্র বিষ সঞ্চারিত হইল : সে বলিল, “আমরা তো ভাই, বিলাতও যাই নাই, সাহেব স্বামীকেও বিবাহ করি নাই, আত খবর কোথায় পাইব । মুখ মেয়েমানুষ মোটামুটি এই বুঝি ষে, বাঙালির ছেলেকে কলেজে এল-এ দিতে হয় ; তাও তো ভাই, সকলে পারে না।" অত্যন্ত নিরীহ সমিষ্ট এবং বন্ধভাবে এই কথাগুলি বলিয়া কমলা চলিয়া আসিল, কলহবিমুখ বিন্থা নিরভেরে সহ্য করিল এবং ঘরে প্রবেশ করিয়া নীরবে কাঁদিতে লাগিল । অপকালের মধ্যে আর-একটি ঘটনা ঘটিল। একটি দরপথ ধনী কুটুব কিয়ংকালের জন্য কলিকাতায় আসিয়া বিন্ধাবাসিনীর পিত্তালয়ে আশ্রয় গ্রহণ করিল। তদুপলক্ষে তাহার পিতা রাজকুমারবাবরে বাড়িতে বিশেষ একটা সমারোহ পড়িয়া গেল। জামাইবাব সাহিরের যে বড়ো বৈঠকখানাটি অধিকার করিয়া থাকিতেন নব-অভ্যাগতদের বিশেষ সমাদরের জনা সেই ঘরটি ছাড়িয়া দিয়া তাঁহাকে মামাবাবরে ঘরে কিছুদিনের জনা আশ্রয় লইতে অনুরোধ করা হইল । এই ঘটনায় অনাথবশধর অভিমান উচ্ছসিত হইয়া উঠিল। প্রথমত, সীর নিকটে গিয়া তাহার পিতুনিন্দা করিয়া তাহাকে কাঁদাইয়া দিয়া বশরের উপর প্রতিশোধ তুলিলেন। তাহার পরে অনাহার প্রভৃতি অন্যান্য প্রবল উপায়ে অভিমান প্রকাশের উপক্ৰম করিলেন। তাহা দেখিয়া বিশখাবাসিনী নিরতিশয় লজিত হইল। তাহার মনে যে একটি সহজ আত্মসম্প্রমবোধ ছিল তাহা হইতেই সে বঝিল, এরপ পথলে সবসমক্ষে অভিমান প্রকাশ করার মতো লজ্জাকর আত্মাবমাননা আর কিছুই নাই। হাতে পারে ধরিয়া, কাঁদিয়া-কাটিয়া বহন কটে সে তাহার স্বামীকে ক্ষান্ত করিয়া রাখিল। বিন্ধা অবিবেচক ছিল না, এইজন্য সে তাহার পিতামাতার প্রতি কোনো দোষারোপ