পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

રહ8 গল্পগুচ্ছ সেই কটা দিন একটি অবলা সীলোক, মানুষের সামান্য শক্তি লইয়া, প্রাণপণ ব্যাকুলতার সহিত, বারে সমাগত যমদতগলার সঙ্গে অনবরত যন্ধ করিয়াছিলেন। তাহার সমস্ত প্রেম, সমস্ত হদয়, সমস্ত যত্ন দিয়া আমার এই অযোগ্য প্রাণটাকে যেন বক্ষের শিশুর মতো দই হতে ঝাঁপিয়া ঢাকিয়া রাখিয়াছিলেন। আহার ছিল না, নিদ্রা ছিল না, জগতের আর-কোনো-কিছর প্রতি দটি ছিল না। ষম তখন পরাহত ব্যান্ত্রের ন্যায় আমাকে তাঁহার কবল হইতে ফেলিয়া দিয়া চলিয়া গেলেন, কিন্তু যাইবার সময় আমার সত্ৰীকে একটা প্রবল থাবা মারিয়া গেলেন। আমার সত্ৰী তখন গভবতী ছিলেন, অনতিকাল পরে এক মত সন্তান প্রসব করিলেন। তাহার পর হইতেই তাঁহার নানাপ্রকার জটিল ব্যামোর সত্রপাত হইল। তখন আমি তাঁহার সেবা আরম্ভ করিয়া দিলাম। তাহাতে তিনি বিব্রত হইয়া উঠিলেন। বলিতে লাগিলেন, "আঃ করো কী! লোকে বলিবে কী ! অমন করিয়া দিনরাত্ৰি তুমি আমার ঘরে যাতায়াত করিয়ো না।” যেন নিজে পাখা খাইতেছি, এইরুপ ভান করিয়া রাত্রে যদি তাঁহাকে তাঁহার জম্বরের সময় পাখা করিতে যাইতাম তো ভারি একটা কাড়াকড়ি ব্যাপার পড়িয়া ষাইত। কোনোদিন যদি তাঁহার শশ্রেষা-উপলক্ষ্যে আমার আহারের নিয়মিত সময় দশ মিনিট উত্তীণ হইয়া যাইত, তবে সেও নানাপ্রকার অননয় অনুরোধ অন্যযোগের কারণ হইয়া দাঁড়াইত স্বল্পমাত্র সেবা করিতে গেলে হিতে বিপরীত হইয়া উঠিত। তিনি বলিতেন, “পুরুষমানুষের অতটা বাড়াবাড়ি ভালো নয়।” আমাদের সেই বরানগরের বাড়িটি বোধ করি তুমি দেখিয়াছ । বাড়ির সামনেই বাগান এবং বাগানের সম্মুখেই গঙ্গা বহিতেছে। আমাদের শোবার ঘরের নীচেই দক্ষিণের দিকে খানিকটা জমি মেহেদির বেড়া দিয়া ঘিরিয়া আমার সত্ৰী নিজের মনের মতো একটকেরা বাগান বানাইয়াছিলেন। সমস্ত বাগানটির মধ্যে সেই খণ্ডটিই অত্যন্ত সাদাসিধা এবং নিতান্ত দিশি । অথাৎ তাহার মধ্যে গন্ধের অপেক্ষা বণের বাহার, ফলের অপেক্ষা পাতার বৈচিত্র্য ছিল না, এবং টবের মধ্যে অকিঞ্চিৎকর উদ্ভিজের পাশেব কাঠি অবলম্বন করিয়া কাগজে নিমিত লাটিন নামের জয়ধ্বজা উড়িত না। বেল জুই গোলাপ গন্ধরাজ করবী এবং রজনীগন্ধারই প্রাদ্ভাব কিছু বেশি। প্রকাণ্ড একটা বকুলগাছের তলা সাদা মাবল পাথর দিয়া বাঁধানো ছিল। সন্থ অবস্থার তিনি নিজে দাঁড়াইয়া দুইবেলা তাহা ধুইয়া সাফ করাইয়া রাখিতেন। গ্রীষ্মকালে কাজের অবকাশে সন্ধ্যার সময় সেই তাঁহার বসিবার পথনি ছিল । সেখান হইতে গঙ্গা দেখা যাইত, কিন্তু গঙ্গা হইতে কুঠির পান্সির বাবরা তাঁহাকে দেখিতে পাইত না। অনেকদিন শয্যাগত থাকিয়া একদিন চৈত্রের শক্লেপক্ষ সন্ধ্যায় তিনি কহিলেন, “ঘরে বন্ধ থাকিয়া আমার প্রাণ কেমন করিতেছে ; আজ একবার আমার সেই বাগানে গিয়া বসিব ।” আমি তাঁহাকে বহ যত্নে ধরিয়া ধীরে ধীরে সেই বকুলতলের প্রস্তরবেদিকার লইয়া গিয়া শয়ন করাইয়া দিলাম। আমারই জানার উপরে তাঁহার মাথাটি তুলিয়া রাখিতে পারিতাম, কিন্তু জানি সেটাকে তিনি অদ্ভুত আচরণ বলিয়া গণ্য করিবেন, তাই একটি বালিশ আনিয়া তাঁহার মাথার তলায় রাখিলাম। দটি-একটি করিয়া প্রসফট বকুল ফল ঝরিতে লাগিল এবং শাখাতরাল হইতে