পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আপদ ×ጫጫ অকিঞ্চনের ঘরের হতভাগ্য মলিন শিশু যখন সন্ধ্যাশব্যার শষ্ট্ৰেয়া রাজপত্রে রাজকন্যা এবং সাত-রাজার-ধন মানিকের কথা শোনে তখন সেই ক্ষীণদীপালোকিত জীপ গহকোণের অন্ধকারে তাহার মনটা সমস্ত দারিদ্র্য ও হীনতার বন্ধন হইতে মন্তে হইয়া এক সবসম্ভব রপেকথার রাজ্যে একটা নতেন রপ, উক্তজবল বেশ এবং অপ্রতিহত ক্ষমতা ধারণ করে; সেইরপ গানের সরের মধ্যে এই যাত্রার দলের ছেলেটি আপনাকে এবং আপনার জগৎটিকে একটি নবীন আকারে সজেন করিয়া তুলিত— জলের ধবনি, পাতার শব্দ, পাখির ডাক এবং যে লক্ষয়ী এই লক্ষীছাড়াকে আশ্রয় দিয়াছেন তাঁহার সহাস্য স্নেহমুখচ্ছবি, তাঁহার কল্যাণমণ্ডিত বলয়বেটিত বাহা দইখানি এবং দলভ সন্দের পপদলকোমল রন্তিম চরণযুগল কী-এক মায়ামন্ত্রবলে রাগিণীর মধ্যে রপোন্তরিত হইয়া যাইত। আবার এক সময় এই গীতমরীচিকা কোথায় অপসারিত হইত, যাত্রার দলের নীলকান্ত ঝাঁকড়া চুল লইয়া প্রকাশ পাইত, আমবাগানের অধ্যক্ষ প্রতিবেশীর অভিযোগক্ৰমে শরং আসিয়া তাহার গালে ঠাস ঠাস করিয়া চড় কষাইয়া দিতেন, এবং বালক-ভক্তমণ্ডলীর অধিনায়ক হইয়া নীলকান্ত জলে প্ৰথলে এবং তরশোখাগে নব নব উপদ্রব সাজন করিতে বাহির হইত। ইতিমধ্যে শরতের ভাই সতীশ কলিকাতা-কলেজের ছটিতে বাগানে আসিয়া আশ্রয় লইল। কিরণ ভারি খুশি হইলেন, তাঁহার হাতে আর-একটি কাজ জটিল; উপবেশনে আহারে আচ্ছাদনে সমবয়স্ক ঠাকুরপোর প্রতি পরিহাসপাশ বিস্তার করিতে লাগিলেন। কখনও হাতে সিদরে মাখিয়া তাহার চোখ টিপিয়া ধরেন, কখনও তাহার জামার পিঠে বাঁদর লিখিয়া রাখেন, কখনও কনাং করিয়া বাহির হইতে বার রখে করিয়া সললিত উচ্চহাসে পলায়ন করেন। সতীশও ছাড়িবার পাত্র নহে; সে তাঁহার চাবি চুরি করিয়া, তাঁহার পানের মধ্যে লঙ্কা পরিয়া, অলক্ষিতে খাটের খরার সহিত তাহার অচিল বধিয়া প্রতিশোধ তুলিতে থাকে। এইরপে উভয়ে সমস্ত দিন তজন ধাবন হাস্য, এমন কি, মাঝে মাঝে কলহ ক্ৰন্দন সাধাসাধি এবং পনেরায় শান্তিস্থাপন চলিতে লাগিল । নীলকান্তকে কী ভূতে পাইল কে জানে। সে কী উপলক্ষ্য করিয়া কাহার সহিত বিবাদ করিবে ভাবিয়া পায় না, অথচ তাহার মন তাঁর তিক্তরসে পরিপন্ণ হইয়া গেল। সে তাহার ভক্ত বালকগুলিকে অন্যায়রপে কাঁদাইতে লাগিল, তাহার সেই পোবা দিশি কুকুরটাকে অকারণে লাথি মারিয়া কেই কেই শব্দে নভোমণ্ডল ধৰনিত করিয়া তুলিল, এমন কি, পথে ভ্রমণের সময় সবেগে ছড়ি মারিয়া আগাছাগলোর শাখাচ্ছেদন कद्विग्ना 5र्गळनाड व्तार्गकाव्न । যাহারা ভালো খাইতে পারে, তাহাদিগকে সম্মখে বসিয়া খাওয়াইতে কিরণ অত্যন্ত ভালোবাসেন। ভালো খাইবার ক্ষমতাটা নীলকান্তের ছিল, সখোদ্য দ্রব্য পুনঃপুনঃ খাইবার অনুরোধ তাহার নিকট কদাচ ব্যথ হইত না। এইজন্য কিরণ প্রায় তাহাকে ডাকিয়া লইয়া নিজে থাকিয়া খাওয়াইতেন, এবং এই ব্লাহরণবালকের তৃপ্তিপবাক আহার দেখিয়া তিনি বিশেষ সাখ অনুভব করিতেন। সতীশ আসার পরে অনবসরবশত নীলকাতের আহারস্থলে প্রায় মাঝে মাঝে কিরণকে অনুপস্থিত থাকিতে হইত পাবে এরাপ ঘটনায় তাহার ভোজনের কিছুমার ব্যাঘাত হইত না, সে সবশেষে মধের বাটি ধাইয়া তাহার জলসদ্ধে খাইয়া তবে উঠিত। কিন্তু আজকাল কিরণ নিজে