পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミbfO গল্পগুচ্ছ সতীশ আর একটা কথা বলিলেই সে তাহার দই হাতের দশ নখ লইয়া কুন্ধ বিড়ালশাবকের মতো সতীশের উপর গিয়া পড়িত। যদি সেই দোয়াতটা নিয়ে থাকিস আমাকে আস্তে আস্তে দিয়ে যা, তোকে কেউ কিছ বলবে না।” নীলকান্তের চোখ ফাটিয়া টস টস করিয়া জল পড়িতে লাগিল, অবশেষে সে মুখ ঢাকিয়া কাঁদিতে লাগিল। কিরণ বাহিরে আসিয়া বলিলেন, "নীলকান্ত কখনোই চুরি করে নি।” শরৎ এবং সতীশ উভয়েই বলিতে লাগিলেন, “নিশ্চয় নীলকান্ত ছাড়া আর কেহই চুরি করে নি।” কিরণ সবলে বলিলেন, "কখনোই না।" শরৎ নীলকান্তকে ডাকিয়া শওয়াল করিতে ইচ্ছা করিলেন, কিরণ বলিলেন, “না, উহাকে এই চুরি সম্বন্ধে কোনো কথা জিজ্ঞাসা করিতে পারবে না।” সতীশ কহিলেন, “উহার ঘর এবং বাক্স খুজিয়া দেখা উচিত।” কিরণ বলিলেন, “তাহা যদি কর তাহা হইলে তোমার সঙ্গে আমার জন্মশোধ আড়ি হইবে। নিদোষীর প্রতি কোনোরপে সন্দেহ প্রকাশ করিতে পাইবে না।” বলিতে বলিতে তাঁহার চোখের পাতা দই ফোঁটা জলে ভিজিয়া উঠিল। তাহার পর সেই দটি করণ চক্ষর আশ্রজেলের দোহাই মানিয়া নীলকাতের প্রতি আর কোনোরপে হসতক্ষেপ করা হইল না। নিরীহ আশ্রিত বালকের প্রতি এইরুপ অত্যাচারে কিরণের মনে অত্যন্ত দয়ার সন্টার হইল। তিনি ভালো দুইজোড়া ফরাশডাঙার ধতিচাদর, দুইটি জামা, একজোড়া নতন জতা এবং একখানি দশ টাকার নোট লইয়া সন্ধ্যাবেলায় নীলকাতের ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিলেন। তাঁহার ইচ্ছা ছিল, নীলকান্তকে না বলিয়া সেই স্নেহ-উপহারগলি আস্তে আসেত তাহার বাক্সর মধ্যে রাখিয়া আসিবেন । টিনের বাক্সটিও তাঁহার দত্ত । অচিল হইতে চাবির গোচ্ছা লইয়া নিঃশব্দে সেই বাক্স খলিলেন। কিন্তু তাঁহার উপহারগুলি ধরাইতে পারিলেন না। বাক্সর মধ্যে লাটাই কণি, কাঁচা আম কাটিবার জন্য ঘষা ঝিনকে, ভাঙা গলাসের তলা প্রভৃতি নানাজাতীয় পদার্থ স্তপোকারে রক্ষিত। কিরণ ভাবিলেন, বাক্সটি ভালো করিয়া গছাইয়া তাহার মধ্যে সকল জিনিস ধরাইতে পারিবেন। সেই উদ্দেশ্যে বাক্সটি খালি করিতে লাগিলেন। প্রথমে লাটাই লাঠিম ছয়রি প্রভৃতি বাহির হইতে লাগিল; তাহার পরে খানকয়েক ময়লা এবং কাচা কাপড় বাহির হইল, তাহার পরে সকলের নীচে হঠাৎ সতীশের সেই বহযেয়ের রাজহংসশোভিত দোয়াতদানটি বাহির হইয়া আসিল । কিরণ আশ্চর্ষ হইয়া আরক্তিমমখে অনেকক্ষণ সেটি হাতে করিয়া লইয়া ভাবিতে লাগিলেন। ইতিমধ্যে কখন নীলকান্ত পশ্চাৎ হইতে ঘরে প্রবেশ করিল তিনি তাহা জানিতেও পারিলেন না। নীলকান্ত সমস্তই দেখিল, মনে করিল কিরণ স্বয়ং চোরের মতো তাহার চুরি ধরিতে আসিয়াছেন এবং তাহার চুরিও ধরা পড়িয়াছে। সে যে কেবল