পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আপদ ՀԵ/> সামান্য চোরের মতো লোভে পড়িয়া চুরি করে নাই, সে যে কেবল প্রতিহিংসাসাধনের জন্য এ কাজ করিয়াছে, সে যে ঐ জিনিসটা গঙ্গার জলে ফেলিয়া দিবে বলিয়াই ঠিক করিয়াছিল, কেবল এক মহেতের দাবলতাবশত ফেলিয়া না দিয়া নিজের বাক্সের মধ্যে পরিয়াছে, সে-সকল কথা সে কেমন করিয়া বঝাইবে। সে চোর নয়, সে চোর নয় ! তবে সে কী। কেমন করিয়া বলিবে সে কী। সে চুরি করিয়াছে কিন্তু সে চোর নহে; কিরণ যে তাহাকে চোর বলিয়া সন্দেহ করিয়াছেন, এ নিষ্ঠর অন্যায় সে কিছতেই বাঝাইতেও পরিবে না, বহন করিতেও পারিবে না। কিরণ একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া সেই দোয়াতদানটা বাক্সের ভিতরে রাখলেন। চোরের মতো তাহার উপরে ময়লা কাপড় চাপা দিলেন, তাহার উপরে বালকের লাটাই লাঠি লাঠিম ঝিনকে কাঁচের টুকরা প্রভৃতি সমস্তই রাখিলেন এবং সবোপরি তাঁহার উপহারগুলি ও দশ টাকার নোটটি সাজাইয়া রাখলেন। কিন্তু পরের দিন সেই ব্রাহরণবালকের কোনো উদ্দেশ পাওয়া গেল না। গ্রামের লোকেরা বলিল, তাহাকে দেখে নাই; পালিস বলিল, তাহার সন্ধান পাওয়া যাইতেছে না। তখন শরং বলিলেন, “এইবার নীলকাতের বাক্সটা পরীক্ষা করিয়া দেখা যাক।” কিরণ জেদ করিয়া বলিলেন, "সে কিছুতেই হইবে না।” বলিয়া বাক্সটি আপন ঘরে আনাইয়া দোয়াতটি বাহির করিয়া গোপনে গঙ্গার জলে ফেলিয়া আসিলেন । শরং সপরিবারে দেশে চলিয়া গেলেন; বাগান এক দিনে শান্য হইয়া গেল; কেবল নীলকান্তের সেই পোষা গ্রাম্য কুকুরটা আহার ত্যাগ করিয়া নদীর ধারে ধারে ঘরিয়া ঘরিয়া, খংজিয়া খাজিয়া, কাঁদিয়া কাঁদিয়া বেড়াইতে লাগিল। ফলশন ১৩০১