পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミげや গল্পগুচ্ছ এইরুপ নীরব বম্বের গোপন আঘাত প্রতিঘাত প্রকাশ্য বিবাদের অপেক্ষা ঢের বেশি দুঃসহ। তৃতীয় পরিচ্ছেদ নীলমণির সমস্ত শরীরের মধ্যে মাথাটাই সব প্রধান ছিল। দেখিলে মনে হইত, বিধাতা যেন একটা সরন কাঠির মধ্যে ফ: দিয়া তাহার ডগার উপরে একটা বড়। বন্দবদ ফটোইয়া তুলিয়াছেন। ডাক্তাররাও মাঝে মাঝে আশঙ্কা প্রকাশ করিত, ছেলেটি এইরুপ বন্দবদের মতোই ক্ষণভঙ্গর ক্ষণপথায়ী হইবে। অনেক দিন পর্যন্ত সে কথা কহিতে এবং চলিতে শেখে নাই। তাহার বিষন্ন গম্ভীর মুখ দেখিয় বোধ হইত, তাহার পিতামাতা তাঁহাদের অধিক বয়সের সমস্ত চিন্তাভার এই ক্ষ-দ্র শিশুর মাথার উপরে চাপাইয়া দিয়া গেছেন। দিদির যত্নে ও সেবায় নীলমণি তাহার বিপদের কাল উত্তীণ হইয়। ছয় বৎসরে °ा मिळ्न । কাতিক মাসে ভাইফোঁটার দিনে নতন জমা চাদর এবং একখানি ললপে:ড় ধতি পরাইয়া বাব সাজাইয়া নীলমণিকে শশী ভাইফোঁট দিতেছেন, এমন সময়ে পবোত্ত পষ্টভাষিণী প্রতিবেশিনী তারা আসিয়া কথায় কথায় শশীর সহিত ঝগড় বাধাইয়া দিল । সে কহিল, গোপনে ভাইয়ের সবনাশ করিয়া ঘটা করিফ ভাইয়ের কপালে ফোঁট। দিবার কোনো ফল নাই । শনিয়া শশী বিসময়ে ক্ৰোধে বেদনায় বজ্ৰাহত হইল। অবশেষে শুনি:ত পাইল, তাহারা সবামী-স্ত্রীতে পরামর্শ করিয়া, নাবলক নীলমণির সম্পত্তি খাজনার দায়ে নিলাম করাইয়া, তাহার স্বামীর পিসতুতো ভাইয়ের নামে বেনামি করিয়া কিনিতেছে । শুনিয়া শশী অভিশাপ দিল, যাহারা এত বড়ে মিথ্যাকথা রটনা করিতে পারে তাহাদের মখে কুঠি হউক । এই বলিয়া সরোদনে স্বামীর নিকট উপস্থিত হইয়া জনশ্রুতির কথা তাহাকে জানাইল । জয়গোপাল কহিল, “আজকালকার দিনে কাহাকেও বিশ্ববাস করিবার জো নাই । উপেন আমার আপন পিসতুতো ভাই, তাহার উপরে বিষয়ের ভার দিয়া আমি সম্পণে নিশ্চিত ছিলাম—সে কখন গোপনে খাজনা বাকি ফেলিয়া মহল হাসিলপরে নি:স্ত্র কিনিয়া লইয়াছে, আমি জানিতেও পারি নাই ।” শশী আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “নালিশ করিবে না ?” জয়গোপাল কহিল, “ভাইয়ের নামে নালিশ করি কী করিয়া। এবং নালিশ করিয়াও তো কোনো ফল নাই, কেবল অর্থ নষ্ট।” স্বামীর কথা বিশ্বাস করা শশীর পরম কতব্য, কিন্তু কিছুতেই বিশ্বাস করিতে পারিল না। তখন এই সখের সংসার, এই প্রেমের গাহপথ্য সহসা তাহার নিকট অত্যন্ত বিকট বীভৎস আকার ধারণ করিয়া দেখা দিল। যে সংসারকে আপনার পরম আশ্রয় বলিয়া মনে হইত, হঠাৎ দেখিল, সে একটা নিষ্ঠর ফাঁদ– তাহদের দটি