পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

షిపాty গল্পগুচ্ছ অপেক্ষা করিয়া অবশেষে এক নতন অভিনেত্রীকে মনোরমার অংশ অভ্যাস করাইয়া লইল— তাহাতে তাহদের অভিনয়ের সময় পিছাইয়া গেল। কিন্তু বিশেষ ক্ষতি হইল না। অভিনয়স্থলে দশক আর ধরে না। শত শত লোক বার হইতে ফিরিয়া যায়। কাগজেও প্রশংসার সীমা নাই । সে প্রশংসা দরদেশে গোপীনাথের কানে গেল। সে আর থাকিতে পারিল না। বিদ্বেষে এবং কৌতুহলে পণ্য হইয়া সে অভিনয় দেখিতে আসিল । প্রথম পট-উৎক্ষেপে অভিনয়ের আরম্ভভাগে মনোরমা দীনহীনবেশে দাসীর মতো তাহার শ্বশুরবাড়িতে থাকে— প্রচ্ছন্ন বিনম্ন সংকুচিত-ভাবে সে আপনার কাজকম করে— তাহার মুখে কথা নাই, এবং তাহার মুখ ভালো করিয়া দেখাই যায় না। অভিনয়ের শেষাংশে মনোরমাকে পিতৃগৃহে পঠাইযা তাহার স্বামী অথ'লোভে কোনো-এক লক্ষপতির একমাত্র কন্যাকে বিবাহ করিতে উদ্যত হইয়াছে। বিবাহের পর বাসরঘরে যখন স্বামী নিরীক্ষণ করিয়া দেখিল তখন দেখিতে পাইল-- এও সেই মনোরমা, কেবল সেই দাসীবেশ নাই-- আজ সে রাজকন্যা সাজিয়াছে, তাহার নিরপেম সৌন্দষ* অভরণে ঐশ্ববযে মন্ডিত হইয়। দশ দিকে বিকীর্ণ হইয়া পড়িতেছে । শিশুকালে মনোরমা তাহার ধনী পিতৃগহ হইতে অপহৃত হইয়া দরিদ্রের গহে পালিত হইয়াছে। বহুকাল পরে সম্প্রতি তাহার পিতা সেই সন্ধান পাইয়া কন্যাকে ঘরে আনাইয়া তাহাব স্বামীর সহিত পুনরায নতন সমারোহে বিবাহ দিয়াছে । তাহার পরে বাসরঘরে মানভঞ্জনের পালা আরম্ভ হইল । কিন্তু ইতিমধ্যে দশকমণ্ডলীর মধ্যে ভারি এক গোলমাল বাধিয়া উঠিল । মনোরমা যতক্ষণ মলিন দাসীবেশে ঘোমটা টানিয়া ছিল ততক্ষণ গোপীনাথ নিস্তব্ধ হইয়া দেখিতেছিল। কিন্তু যখন সে আভরণে ঝলমল করিয়া, রক্টাবর পরিয়া, মাথার ঘোমটা ঘচোইয়া, রাপের তরঙ্গ তুলিয়া বাসরঘরে দাঁড়াইল এবং এক অনিবাচনীয় গবে গৌরবে গ্রীবা বঙ্কিম করিয়া সমস্ত দশকমণ্ডলীর প্রতি এবং বিশেষ করিয়া সম্মুখবতী গোপীনাথের প্রতি চকিত বিদ্যুতের ন্যায় অবজ্ঞাবস্তুপর্ণ তীক্ষা কটাক্ষ নিক্ষেপ করিল— যখন সমস্ত দশকমণ্ডলীর চিত্ত উদবেলিত হইয়া প্রশংসার করতালিতে নাট্যস্থলী সদেীঘকাল কম্পান্বিত করিয়া তুলিতে লাগিল— তখন গোপীনাথ সহসা উঠিয়া দড়িাইয়া “গিরিবালা” “গিরিবালা” করিয়া চীৎকার করিয়া উঠিল। ছটিয়া স্টেজের উপর লাফ দিয়া উঠিবার চেষ্টা করিল— বাদকগণ তাহাকে ধরিয়া ফেলিল । এই অকস্মাৎ রসভঙ্গে মমাতিক কন্ধ হইয়া দশকগণ ইংরাজিতে বাংলায় “দর করে দাও” “বের করে দাও” বলিয়া চীংকার করিতে লাগিল । গোপীনাথ পাগলের মতো ভগ্নকণ্ঠে চীৎকার করিতে লাগিল, “আমি ওকে খন করব, ওকে খন করব।” পলিস আসিয়া গোপীনাথকে ধরিয়া টানিয়া বাহির করিয়া লইয়া গেল। সমস্ত কলিকাতা শহরের দশক দুই চক্ষ ভরিফা গিরিবালার অভিনয় দেখিতে লাগিল, কেবল গোপীনাথ সেখানে সথান পাইল না। বৈশাখ ১৩o২